সরকারের কড়াকড়ির কারণে ক্লিন ফিড ছাড়া সম্প্রচারে থাকা সব বিদেশি চ্যানেল বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, মন্ত্রণালয় কোনো চ্যানেলই বন্ধ করেনি।
বরং ক্লিন ফিড না পাওয়ায় এই চ্যানেলগুলোর এজেন্ট বা অপারেটররাই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি।
শনিবার চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে বছরের পর বছর ধরে আমাদের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিদেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে বছরে ২ হাজার কোটি টাকার মতো ইনভেস্টমেন্ট হয়নি। আমরা বহুবার তাগাদা দিয়েছি এবং শেষ পর্যন্ত এখানে বিদেশি চ্যানেলের যারা প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে এবং কেব্ল অপারেটর ও টেলিভিশন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে ১ অক্টোবর থেকে আমরা আইন কার্যকর করব।
‘সে অনুযায়ী গতকাল (শুক্রবার) থেকে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি। যারা এই চ্যানেলগুলোর এজেন্ট বা অপারেটর তারাই... যেহেতু বিজ্ঞাপনমুক্ত ফিড তাদের দিচ্ছে না, তাই তারা সম্প্রচার বন্ধ করেছে।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ফাইল ছবি
সরকার পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার থেকে সারা দেশে বিদেশি চ্যানেলের ক্লিন ফিড প্রচারে কড়াকড়ি আরোপ করে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিশ্চিতে সারা দেশেই চলছে মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম। এই কড়াকড়ির মধ্যে ক্লিন ফিড না থাকায় শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই দেশের বেশির ভাগ স্থানে বন্ধ হয়ে যায় বিদেশি চ্যানেলগুলো।
অবশ্য ক্লিন ফিড প্রচার করে যে কোনো বিদেশি চ্যানেলই সম্প্রচারে থাকতে পারবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যে সব বিদেশি চ্যানেল বিজ্ঞাপনহীনভাবে চালাচ্ছে তারা কিন্তু চলছে, তাদের সম্প্রচারে কিন্তু কোনো বাধা নেই।
‘এখানে আইন মানা বিদেশি চ্যানেলের যেমন দায়িত্ব তেমনি যারা বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার করে তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে,’ যোগ করেন তথ্যমন্ত্রী।
বিদেশি চ্যানেলগুলো ক্লিন ফিড নিশ্চিত করতে না পারার কারণেই দেশে আপাতত কোনো বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করা যাচ্ছে না বলে শুক্রবার নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (কোয়াব) সাবেক মহাসচিব নিজাম উদ্দিন মাসুদ।
তিনি বলেন, ‘১ অক্টোবর থেকেই আমরা সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। কোনো চ্যানেলেরই ক্লিন ফিড পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে আমরা সম্প্রচার বন্ধ রেখেছি।’
এদিকে বিদেশি টিভি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনমুক্ত বা ক্লিন ফিড সম্প্রচার বাস্তবায়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের টিভি চ্যানেল মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) এবং টিভি সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)।
বিজেসি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০০৬ সালের ক্যাবল নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনে ক্লিন ফিড সম্প্রচারের কথা থাকলেও এ বিধান কার্যকরে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
বিবৃতিতে বর্তমান তথ্যমন্ত্রীর ‘সাহসী পদক্ষেপকে’ স্বাগত জানিয়েছে বিজেসি।
সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এতে দেশি টেলিভিশন চ্যানেল শিল্পের আর্থিক সংকট কমবে এবং উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সম্প্রচারকর্মীরাও এর সুফল পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’