বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যেমন রিং আইডির ফাঁদ

  •    
  • ২ অক্টোবর, ২০২১ ১৬:১৫

রিং আইডি থেকে বলা হয়, তাদের প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুলে দুটি প্যাকেজের আওতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন ৭৫০ টাকা হিসেবে সপ্তাহে ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা করা যায়। আর এই টাকা আয়ের জন্য খুব একটা পরিশ্রম করতে হয় না। প্রতিদিন যথাক্রমে ৫০টি ও ১০০টি করে বিজ্ঞাপন দেখলেই হয়।

রিং আইডি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপ। গুগলের প্লেস্টোর থেকে ডাউটলোড করে অ্যাপটিতে লগইন করলেই পাওয়া যাবে ফেসবুকের মতো অ্যাকাউন্ট। সেখানে মেসেজ আদান-প্রদান, কল দেয়া থেকে শুরু করে লাইভও করা যায়। এই অ্যাপের বিশেষত্ব হলো বিনোদনের পাশাপাশি আছে আয়ের সুযোগও।

এই প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে আয়ের সুযোগের কথা জানিয়ে প্রলুব্ধ করার মতো বিভিন্ন অফার দেয়া হয়। এখানে দুটি অফারের আওতায় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে; একটি ১২ হাজার টাকার প্যাকেজ, অপরটি ২২ হাজার টাকার প্যাকেজ।

রিং আইডি থেকে বলা হয়, দুই প্যাকেজের আওতায় বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন ৭৫০ টাকা হিসেবে সপ্তাহে ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। আর এই টাকা আয়ের জন্য খুব একটা পরিশ্রম করতে হয়না। প্রতিদিন ৫০টি ও ১০০টি করে বিজ্ঞাপন দেখলেই হয়।

সেই সঙ্গে এমএলএম ব্যবসায়ের মতো কাউকে আইডি খুলতে রেফার করলেও চেইন অনুযায়ী নিয়মিত টাকা জমতে থাকবে ওই বিনিয়োগকারীর ওয়ালেটে। দেড় থেকে দুই মাসে বিনিয়োগের অর্থ ফিরে আসে।

ধারাবাহিক আয়ের এমন লোভনীয় অফারে এখন পর্যন্ত অসংখ্য গ্রাহক রিং আইডিতে বিনিয়োগ করেছেন। এমনকি নিজেরা বিনিয়োগ করার পর অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপনও দিয়ে যাচ্ছেন গ্রাহকরা।

রিং আইডি যাত্রা শুরু করে ২০১৫ সালে। বাংলাদেশি দুই প্রকৌশলী ভাই মিলে এই অ্যাপ তৈরি করেন। বড় ভাই শরিফুল ইসলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, আর ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে রিং আইডির পরিকল্পনা করেন।

অ্যাপটি লঞ্চ করার পর বড় ভাইয়ের স্ত্রী আইরিন ইসলাম চেয়ারম্যান, বড় ভাই এমডি এবং ছোট ভাই পরিচালক হিসেবে রিং আইডি পরিচালনা শুরু করেন। রাজধানীর নিকেতনে তাদের অফিস। রিং আইডির অ্যাপের পর তারা রিং আইডি ই-কমার্স সাইটও পরিচালনা শুরু করেন।

সিআইডি বলছে, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ই-কমার্স সাইটগুলোর মতো গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের জন্য পরিকল্পনা সাজিয়েছিল রিং আইডি।

ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার।

সাইফুলকে শুক্রবার রাতে গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাইফুলসহ রিং আইডির অন্য মালিক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারা দেশে একাধিক মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

এর মধ্যে রাজধানীর ভাটারা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং নিয়ন্ত্রণ আইন ও প্রতারণার অভিযোগে সাইফুলসহ রিং আইডির মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন একজন ভুক্তভোগী। এই মামলাতেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সাইফুলকে।

সাইফুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিং আইডির প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কিছু তথ্য পেয়েছে সিআইডি। তার কাছ থেকে আরও তথ্য জানতে শনিবার তাকে আদালতে হাজির করে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে সিআইডি।

তিনি বলেন, ‘রিং আইডি একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অ্যাপ লঞ্চ করলেও পরে তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধভাবে আমানত সংগ্রহ করেছেন। তারা গত তিন মাসে গ্রাহকদের কাছ থেকে ২০০ কোটি টাকার ওপর টাকা তুলেছেন।’

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, এসএসএল নামের পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ১২ হাজার ও ১৫ হাজার টাকার প্যাকেজের আওতায় গ্রাহকদের কাছ এসব অর্থ আদায় করেছে।

রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘আমরা তাদের তিনটি ব্যাংকে হিসাব যাচাই করে শুধু গত তিন মাসের চিত্র পেয়েছি। তারা আরও আগে থেকেই গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা তুলছে, যা একেবারেই বেআইনি। কারণ, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে আসছিল।’

গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া এই অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছে সিআইডি।

রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘রিং আইডি এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা তুলেছে। আর এই বিপুল টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে কি না, তা নিয়ে মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় অনুসন্ধান চালাচ্ছে সিআইডি। প্রমাণ পাওয়া গেলে রিং আইডির মালিকদের মানি লন্ডারিং মামলার আওতায় আনা হবে।’

রিং আইডির সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংককেও অনুরোধ জানিয়েছে সিআইডি।

এ বিভাগের আরো খবর