বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জঙ্গিদের ‘ডিরেডিক্যালাইজেশনের’ চিন্তা আছে, উদ্যোগ নেই

  •    
  • ২ অক্টোবর, ২০২১ ১৩:৩৩

দেশের কারাগারগুলোতে কয়েক হাজার জঙ্গি রয়েছে। তাদের মনে যে বিশ্বাস, সেটি পাল্টে দিয়ে আবার সুপথে নিয়ে আসার উদ্যোগ বা ‘ডিরেডিক্যালাইজ’ করার মতো ব্যবস্থাপনা কোনো কারাগারেই নেই। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, তারাও চান এই প্রক্রিয়া শুরু হোক। যেজন্য একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে, যা দ্রুতই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

চার বছর আগে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অপারেশন শাখার সদস্য সাজ্জাদ ওরফে শামস ওরফে আরাফাতকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এরপর থেকে আরাফাত কারাগারে। সম্প্রতি সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যা মামলায় আরাফাতসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত।

যে বিশ্বাস বা আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছিলেন, গ্রেপ্তারের চার বছরেও তাকে সেই ধ্যান ধারণা থেকে ফেরান যায়নি। উল্টো মামলার রায় ঘোষণার দিন হাস্যোজ্জ্বল থাকতে দেখা যায় আরাফাতসহ অন্য জঙ্গিদের।

রায় শুনে কাঠগড়ায় দাঁড়ান আরাফাতকে বলতে শোনা যায়, ‘এই তাগুতি বিচার ব্যবস্থা আমাদের পায়ের নিচে।’

জঙ্গিবাদ পর্যবেক্ষক ও জঙ্গিবাদ দমনে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মন্তব্য বলে দেয়, গত চার বছরে তার বা তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হয়নি। কারাগারে থাকা অবস্থায় ইসলাম বা জিহাদ নিয়ে তার যে ভ্রান্ত ধারণা তা পরিবর্তন করা সম্ভব ছিল। আর এজন্য প্রয়োজন ছিল, আরাফাতকে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দেয়া।

এসব জঙ্গিদের ইসলাম ধর্মের স্কলারদের দিয়ে ‘কাউন্টার ন্যারেটিভের মাধ্যমে’ কাউন্সিলিং করানোর পরামর্শ দেন পর্যবেক্ষকরা।

সরকারের এই পরিকল্পনা নেই এমন নয়, কিন্তু আটকে আছে পরিকল্পনাতেই। বাস্তবায়নের চেষ্টা আর আগায়নি।

দেশের কারাগারগুলোতে কয়েক হাজার জঙ্গি রয়েছে। কিন্তু তাদের মনে যে বিশ্বাস, সেটি পাল্টে দিয়ে আবার সুপথে নিয়ে আসার উদ্যোগ বা ‘ডিরেডিক্যালাইজ’ করার মতো ব্যবস্থাপনা কোনো কারাগারেই নেই।

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, তারাও চান এই প্রক্রিয়া শুরু হোক। যেজন্য একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে, যা দ্রুতই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ বলছে, এই উদ্যোগ নেবে কারা মহাপরিদর্শক।

দেশে জঙ্গিবাদ পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুধু কারাগারে নয়, যারা বাইরে আছেন বা জামিনে আছেন, তাদেরকেও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে স্বাভাবিক পথে ফেরানোর উদ্যোগ নিতে হবে। জামিনে আছে, সাজা খেটে বেরিয়েছে তাদেরকেও এই ডিরেডিক্যালাইজেশনের আওতায় আনতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এটা তখনই সফল হবে, আমাদের মনে রাখতে হবে, একটা ছেলে ফাঁসি হয়েছে জেনেও হাসে এবং ভি চিহ্ন দেখাতে পারে, তারা একটা শক্ত আদর্শিক লড়াইয়ে আছে।

‘সবচেয়ে জরুরি আদর্শিক লড়াই। জঙ্গিবাদে উদ্ধুদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে যে আদর্শিক অবস্থা তৈরি হয়েছে, তার চেয়েও শক্তিশালী অবস্থান থেকে তাকে ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে। যেটার উপস্থিতি আমাদের ব্যবস্থাপনায় নেই।’

তিনি বলেন, জঙ্গিদের ডিরেডিক্যালাইজ করার ক্ষেত্রে কারা অধিদপ্তরের যারা এর সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, তাদেরকেও প্রশিক্ষিত করতে হবে।

কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মোমিনুর রহমান মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব কিছু ইনিশিয়েটিভ আছে। ডিরেডিক্যালাইজড করার জন্য। এজন্য নিজেদের আগে প্রশিক্ষিত হতে হবে। আগে জানতে হবে, আমাদের কী করতে হবে। এ ব্যাপারেও আমরা খুবই আন্তরিক। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণটা সঠিকভাবে দিতে পারলে পরিবর্তনটা সম্ভব। এ ধরনের প্রশিক্ষণ কোথায় থেকে নেয়া যায়, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা চলছে। প্রস্তাবনা তৈরি করছি, এটা দ্রুতই পাঠাতে পারব। অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আমরা কাজ করি। কাউন্টার টেরোরিজমের সঙ্গে কাজ করার একটা পরিকল্পনা আছে। এটা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, এটা নিয়ে কাজ চলছে।

‘কাউন্টার টেরোরিজমের একটা প্রকল্প আছে, সেটা আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’

বিষয়টি ইতিবাচকভাবে ভাবছে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটও।

কারাগারে জঙ্গিদের নিয়ে কাজ করার জন্য চিঠিও দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান উপ মহাপরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা সুরক্ষা বিভাগের মাধ্যমে কারা অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছি। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারব।’

এ বিভাগের আরো খবর