বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশে ফিরতে চাওয়ায় মুহিবুল্লাহকে হত্যা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

  •    
  • ২ অক্টোবর, ২০২১ ১২:০৪

বলছেন, ‘মুহিবুল্লাহ নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যেতে চেয়েছিলেন, সে কারণে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাকে হত্যা করেছে। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যাকারীদের অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করা হবে। এ হত্যাকাণ্ডে যে বা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’

নিজ দেশে ফিরতে চাওয়ায় রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ। এক খুদে বার্তায় পাঠানো প্রতিক্রিয়ায় এমনটি জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

খুদে বার্তায় মোমেন বলছেন, ‘মুহিবুল্লাহ নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যেতে চেয়েছিলেন, সে কারণে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাকে হত্যা করেছে।’

এ হত্যায় যারা জড়িত তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, ‘রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যাকারীদের অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করা হবে। এ হত্যাকাণ্ডে যে বা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’

গত ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিজ অফিসে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। এ হত্যাকাণ্ডের পর এই প্রথম কোনো বিবৃতি দিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের শীর্ষ এ নেতার মৃত্যুতে এর আগে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন।

রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে গত শুক্রবার রাতে বার্তা দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিনকেন। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ বার্তা প্রকাশ করা হয়।

ব্লিনকেনের বিবৃতিতে বলা হয়, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান করে জঘন্য ওই অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

২০১৮ সালে রোহিঙ্গা আগমনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে এই মুহিবুল্লাহর ডাকেই বালুখালির এক্সটেনশন মাঠে সমবেত হয়েছিলেন প্রায় ৫ লাখ নারী-পুরুষ। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে হওয়া ওই সমাবেশের খবর ফলাও করে প্রচার করেছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

সমাবেশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন মুহিবুল্লাহ। এর প্রথমেই ছিল মিয়ানমারের আরাকানের পিতৃভূমিতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন। তবে শর্ত ছিল, এ জন্য অবশ্যই মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের হারানো সম্মান, মর্যাদা ও নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে।

মুহিবুল্লাহর এই দাবি সাধারণ রোহিঙ্গাদেরও প্রাণের দাবি। এ কারণে মুহিবুল্লাহকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করেন তারা।

এই সমাবেশ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও মিয়ানমার সরকারের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে এটি মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের নতুন রাস্তা খুলে দেয় পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘের কাছে।

২০১৮ সালের ওই সমাবেশের পর রোহিঙ্গা ইস্যুতে সব আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা ও পশ্চিমা বিশ্বের আস্থার স্থল হয়ে ওঠেন মুহিবুল্লাহ।

মুহিবুল্লাহর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রকাশিত হতে থাকে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখতে আসা বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠেন মুহিবুল্লাহ।

একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার সরকারের জন্য এক চাপের নাম হয়ে উঠেছিলেন মুহিবুল্লাহ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রাষ্ট্রের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সরকারের চালানো অমানবিক হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরতেন তিনি।

এ ছাড়া বিভিন্ন ফোরামেও রোহিঙ্গাদের দাবিদাওয়া তুলে ধরতেন মুহিবুল্লাহ।

একাধিক রোহিঙ্গা নেতা নিউজবাংলাকে জানান, মুহিবুল্লাহর স্বর ছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী, সরকার ও তাদের মিত্রদের জন্য বিব্রতকর। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্যও তিনি ছিলেন অস্বস্তির কারণ। বিশেষত, যেসব সংগঠন প্রত্যাবাসনবিরোধী ছিল। এদের মধ্যে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) বা আল ইয়াকিন অন্যতম।

রোহিঙ্গা নেতাদের বিশ্বাস, এই সন্ত্রাসী সংগঠনের কারণেই তাদের পিতৃভূমি ছাড়তে হয়েছে। এরা মিয়ানমার সরকারেরই পুতুল সংগঠন। মূলত কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় এই ছায়া সংগঠন দাঁড় করায় মিয়ানমার। পরে তাদের মাধ্যমে সীমান্তচৌকিতে হামলার নাটক করে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ত্যাগে বাধ্য করে।

এ সময় ৩ রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে। এতে তিনি ঘটনাস্থলে পড়ে যান। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ‘এমএসএফ’ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিভাগের আরো খবর