বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ছাত্রলীগ মানুষের উপকার করে জানা ছিল না’

  •    
  • ২ অক্টোবর, ২০২১ ০১:১৫

সাফওয়ান বলেন, ‘আমরা মানুষের মন জয় করার জন্য রাজনীতি করি। আমাদের হয়তো কিছু ভুল আছে। তবে আমাদের ভালো কাজগুলোর যখন প্রশংসা পাই, তখন অনেক ভালো লাগে।’

বেলা ১১টা বেজে ২০ মিনিট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়ে ২০ মিনিট শেষ। একজন নারী হাঁপাতে হাঁপাতে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ভবনের সামনে। তার ছেলে পরীক্ষায় বসেছে, কিন্তু এইচএসসির রেজিস্ট্রেশন কার্ড নেয়নি। পাশে থাকা ছাত্রলীগের একটি হেল্প বুথে বিষয়টি জানালে তারা ‘জয় বাংলা বাইক সার্ভিস’ ব্যবহার করে দ্রুত ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষার কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন কার্ড পৌঁছে দেয়।

খুশিতে কৃতজ্ঞতায় ওই নারী বলছেন, ‘ছাত্রলীগের এই বাচ্চাগুলোর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার জানা ছিল না, ছাত্রলীগ এভাবে মানুষের উপকার করে। আজকে জানলাম।’

ভর্তীচ্ছু এ শিক্ষার্থীর অভিভাবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ২০০৩ সালে মাস্টার্স শেষ করেন।

এই অভিভাবক বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশে বাসা থেকে রওনা হই। পরীক্ষার হলে এইচএসসি পরীক্ষার মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড রাখা বাধ্যতামূলক হলেও বাসা থেকে বের হয়ে অর্ধেক পথ আসার পর খেয়াল করলাম এটি নেয়াই হয়নি। ভুলে বাসায় ফেলে এসেছি। এরপর ছেলেকে রিকশায় করে পরীক্ষার হলের দিকে পাঠিয়ে আমি বাসায় ফিরে আসি।’

বাসা থেকে রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে ক্যাম্পাসে যখন ফিরি তখন পরীক্ষা শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিট বাকি ছিল। সব গেট বন্ধ থাকায় নিরাপত্তারক্ষীরা আমাকে ঢুকতে দেয়নি। পরে অনেক বুঝিয়ে ঢুকি। তখন অনেক সময় পার হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তবে আল্লাহর অশেষ রহমত আমার কিছু বাচ্চা সেখানে ছিল। তাদের আমি আমার সমস্যার কথা বললাম। এরপর তারা বাইকের ব্যবস্থা করে আমাকে ছেলের পরীক্ষার হলের সামনে নিয়ে আসে। এরপর তারা আমার কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে আমার ছেলের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।’

আইবিএ ভবনের সামনে ছিল মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের হেল্প বুথ। সেখানে হল ছাত্রলীগের কর্মী সাফওয়ান চৌধুরীকেই ওই অভিভাবক তার সমস্যার কথা প্রথম জানান। সাফওয়ান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে সাফওয়ান চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ভবনের সামনে আমাদের হল ছাত্রলীগের হেল্প বুথ ছিল। তখন ওই আন্টি দৌড়াতে দৌড়াতে আমাদের বুথের সামনে আসেন। ওনার সমস্যার কথা আমাকে বললে, আমি জয় বাংলা বাইক সার্ভিসের বাইকার আমার বন্ধু শৈশব খানকে ফোন দিই।

‘সে তার বাইকে আন্টিকে নেয়। অন্য বাইকে আমি এবং আমাদের হল ছাত্রলীগের হাসিবুল হাসান শান্ত ভাইকে নিয়ে ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষা কেন্দ্র ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে পৌঁছাই। তখন ১১টা ২৫ বাজে। এরপর আন্টি থেকে রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে অনুষদের গেটে দাঁড়ানো কর্মকর্তাদের বললে তারা কার্ডটি ভবনের সাত তলায় ওই শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেয়।’

সাফওয়ান বলেন, ‘তখনও আন্টির টেনশন হচ্ছিল। তারপর আমরা আন্টিকে ছাত্রলীগের বিশ্রামাগারে নিয়ে যাই। এরপর উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আমাদের জন্য দোয়া করে। ছাত্রলীগকর্মী হিসেবে এটাই আসলে বড় প্রশান্তির বিষয়। আমরা মানুষের মন জয় করার জন্য রাজনীতি করি। আমাদের হয়তো কিছু ভুল আছে। তবে আমাদের ভালো কাজগুলোর যখন প্রশংসা পাই তখন অনেক ভালো লাগে।’

শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের সাতটি বিভাগের আরও সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে এ পরীক্ষা শুরু হয়। চলে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটে মোট আসন রয়েছে ১ হাজার ৮১৫টি। এর বিপরীতে এক লাখ ১৭ হাজার ৯৫৭ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। ওই হিসাবে আসনপ্রতি লড়বেন ৬৪ জন শিক্ষার্থী।

পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের ‍মুখেও হাসি ছিল। পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মান, শিক্ষকদের আচরণ এবং পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ জানান তারা।

কুমিল্লার একটি কলেজ থেকে আসা ভর্তীচ্ছু জাকিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘প্রশ্ন একদম স্ট্যান্ডার্ড হয়েছে, যারা প্রস্তুতি নিয়েছে আশা করি তারা লিখতে পারবে।’

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউজ্জামান বলেন, ‘কেমিস্ট্রির প্রশ্নগুলো আমার মানের মনে হয়নি। প্রাকটিক্যালের চেয়ে থিওরিটিক্যাল বেশি দিয়েছে। গতবারও এটা করেছে। তবে সামগ্রিক দিক মিলিয়ে প্রশ্ন মানের হয়েছে বলা যায়।’

পরিদর্শক শিক্ষকদের আচরণেও সন্তোষ জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, ‘আমি শুরুতে একটা ওএমআর শিটে লিখতে ভুল করেছি। এরপরও শিক্ষক আমাকে নতুন ওএমআর শিট দিয়েছেন।’

শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘প্রশ্ন ভালো হয়েছে। যারা পড়ালেখা করেছে, তারা পারবে বলে মনে করি। তবে প্রশ্নে কোনো ভুল আমার চোখে পড়েনি। শিক্ষকরাও যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন।’

পরীক্ষার হলে যথেষ্ট স্বাস্থ্যবিধিও ছিল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্ট্যারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পাস করা শিক্ষার্থী আনিকা তাহসিন।

তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার হলে আমাদের যথেষ্ট সামাজিক দূরত্ব মেনে বসানো হয়েছে। পরীক্ষার পরিবেশ দেখে আমার ভালো লেগেছে। ভালো পরীক্ষা দিতে হলে পরিবেশও গুরুত্বপূর্ণ। সেটি আমি সম্পূর্ণ পেয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর