সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করে এমন বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার দেশে বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ রেখেছেন ক্যাবল অপারেটররা।
নিউজবাংলাকে ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের (কোয়াব) সাবেক মহাসচিব নিজাম উদ্দিন মাসুদ বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘১ অক্টোবর থেকেই আমরা সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। কোনো চ্যানেলেরই ক্লিন ফিড পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে আমরা এমন সব চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ রেখেছি।
‘ডিস্ট্রিবিউটররা হয়তো বিষয়টি তথ্য মন্ত্রণালয়ে জানিয়ে কিছু সময়ও চেয়েছেন। ক্লিন ফিড যেহেতু পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করব না।’
সারাদেশে ক্লিন ফিড ছাড়া বিদেশি চ্যানেল প্রচার না করতে সরকারের নির্দেশনার পর বন্ধ রয়েছে সব বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার। শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদেশি চ্যানেলগুলো দেখা যাচ্ছে না।
ক্যাবল অপারেটররা জানিয়েছেন, বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করে—এমন বিদেশি চ্যানেলগুলো থেকে বিজ্ঞাপন কেটে বাদ দিয়ে সম্প্রচার করা সম্ভব নয়। এ কারণে তারা চ্যানেলগুলো দেখানোই বাদ দিয়ে দিয়েছেন। সরকারের নতুন কোনো নির্দেশনা না আশা পর্যন্ত সেগুলো বন্ধই থাকবে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়, সেগুলো বাংলাদেশে দেখানো যাবে না।
এর আগে গত মাসের শুরুতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অফ টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো), টিভি চ্যানেল ডিস্ট্রিবিউটর ও ক্যাবল অপারেটর প্রতিনিধিদের বৈঠকে ক্লিনফিড (বিজ্ঞাপন ছাড়া) ছাড়া বিদেশি চ্যানেল ১ অক্টোবর থেকে না চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করার কথাও বলে মন্ত্রণালয়।
সম্প্রচার বন্ধ বিদেশি চ্যানেলগুলো দেখতে গেলে টেলিভিশনের পর্দায় দর্শকদের একটি বার্তা দেখানো হচ্ছে। তাতে লেখা রয়েছে- গ্রাহকদের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ১ অক্টোবর থেকে বিজ্ঞাপনবিহীন ক্লিন ফিড ছাড়া কোনো বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করা যাবে না। তাই সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ক্যাবল অপারেটররা বিজ্ঞাপন থাকা বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। এর ফলে সৃষ্ট অসুবিধার জন্য তারা দুঃখিত।
শুক্রবার থেকে বিদেশি চ্যানেলগুলো বন্ধের বিষয়ে বৃহস্পতিবারই আভাস দিয়েছিলেন তথ্যমন্ত্রী।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তথ্য মন্ত্রী জানান, ১ অক্টোবর থেকে আমরা সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করব। কোনো বিদেশি চ্যানেলে ক্লিনফিড দেখানো না হলে এবং মন্ত্রণালয়, টেলিভিশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ক্যাবল অপারেটর ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে ক্যাবল লাইনে সম্প্রচারের জন্য টেলিভিশনগুলোর নির্ধারিত ক্রমের ব্যত্যয় হলে বা কোনো ক্যাবল অপারেটর আইন ভঙ্গ করে নিজেরা বিজ্ঞাপন, অনুষ্ঠান দেখালে বা আইনের অন্য কোনো ব্যত্যয় ঘটালে সংশ্লিষ্ট চ্যানেল ডাউনলিংকের অনুমতিপ্রাপ্ত ডিস্ট্রিবিউটরদের এবং ক্যাবল অপারেটরদের ওপরই আইন ভঙ্গের দায় বর্তাবে। শুক্রবার থেকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বিদেশি চ্যানেল ডাউনলিংকের অনুমতি পেয়েছে ক্লিনফিডের ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আগস্ট মাসে বৈঠক করে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে ১ অক্টোবর থেকে আমরা আইন প্রয়োগ করব। দিনের পর দিন তারা সময় নেবে, কালক্ষেপণ করবে, এটি হয় না। ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, নেপালসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ক্লিনফিড ছাড়া বিদেশি চ্যানেল কেউ দেখাতে পারে না। আর আমাদের দেশে বিদেশি চ্যানেলগুলো ক্লিন ফিড পাঠাচ্ছে না, এই অজুহাতে এখানে ক্লিন ফিড চালাবে না এটা হয় না।’
১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে ক্লিন ফিড সম্প্রচার কার্যকর করার বিষয়টি সম্প্রতি দিল্লী সফরকালে ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীকেও জানিয়েছেন উল্লেখ করেন ড. হাছান মাহমুদ।