বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মুহিবুল্লাহ হত্যা: অজ্ঞাতদের নামে মামলা

  •    
  • ১ অক্টোবর, ২০২১ ১৩:০৪

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার ভাই হাবিব উল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে উখিয়া থানায় মামলা করেছেন।’

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয়ে আসামিদের নামে মামলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে উখিয়া থানায় মামলাটি করেন মুহিবুল্লাহর ভাই হাবিব উল্লাহ।

মামলার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাঞ্জুর মোর্শেদ।

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার ভাই হাবিব উল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে উখিয়া থানায় মামলা করেছেন। মামলা নং- ১২৬, তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর।’

ওসি আরও জানান, ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আশা করেন, শিগগিরই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

বুধবার রাত পৌনে ৯টার দিকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা মুহিবুল্লাহর নিজ অফিস লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকে পাঁচ রাউন্ড গুলি করে।

কীভাবে এ হত্যা

এশার নামাজ শেষে উখিয়ার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পে নিজের অফিসে বসে ছিলেন রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ। সেখানেই হাজির হয় ২০-২৫ জনের একটি সশস্ত্র দল। মুহিবুল্লাহর বুক লক্ষ্য করে গুলি চালায় তাদের একজন।

বুধবার রাতে প্রায় বিনা বাধায় রোহিঙ্গাদের প্রভাবশালী এই নেতাকে হত্যা করে অস্ত্রধারীরা।

হত্যার পেছনের কারণ

২০১৮ সালে রোহিঙ্গা আগমনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে এই মুহিবুল্লাহর ডাকেই বালুখালির এক্সটেনশন মাঠে সমাবেত হয়েছিলেন প্রায় পাঁচ লাখ নারী-পুরুষ। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে হওয়া ওই সমাবেশের খবর ফলাও করে প্রচার করেছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

সমাবেশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন মুহিবুল্লাহ। এর প্রথমেই ছিল মিয়ানমারের আরাকানের পিতৃভূমিতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন। তবে শর্ত ছিল, এ জন্য অবশ্যই মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের হারানো সম্মান, মর্যাদা ও নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে।

মুহিবুল্লাহর এই দাবি সাধারণ রোহিঙ্গাদেরও প্রাণের দাবি। এ কারণে মুহিবুল্লাহকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করেন তারা।

এই সমাবেশ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও মিয়ানমার সরকারের জন্য বিব্রতকর ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। একই সঙ্গে এটি মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের নতুন রাস্তা খুলে দেয় পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘের কাছে।

২০১৮ সালের ওই সমাবেশের পর রোহিঙ্গা ইস্যুতে সব আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা ও পশ্চিমা বিশ্বের আস্থার স্থল হয়ে ওঠেন মুহিবুল্লাহ।

মুহিবুল্লাহর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রকাশিত হতে থাকে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখতে আসা বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠেন মুহিবুল্লাহ।

একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার সরকারের জন্য এক চাপের নাম হয়ে উঠেছিলেন মুহিবুল্লাহ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রাষ্ট্রের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সরকারের চালান অমানবিক হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরতেন তিনি।

এ ছাড়া, বিভিন্ন ফোরামেও রোহিঙ্গাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতেন মুহিবুল্লাহ।

একাধিক রোহিঙ্গা নেতা নিউজবাংলাকে জানান, মুহিবুল্লাহর স্বর ছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী, সরকার ও তাদের মিত্রদের জন্য বিব্রতকর। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্যও তিনি ছিলেন অস্বস্তির কারণ। বিশেষত, যেসব সংগঠন প্রত্যাবাসনবিরোধী ছিল। এদের মধ্যে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) বা আল ইয়াকিন অন্যতম।

রোহিঙ্গা নেতাদের বিশ্বাস, এই সন্ত্রাসী সংগঠনের কারণেই তাদের পিতৃভূমি ছাড়তে হয়েছে। এরা মিয়ানমার সরকারেরই পুতুল সংগঠন। মূলত কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় এই ছায়া সংগঠন দাঁড় করায় মিয়ানমার। পরে তাদের মাধ্যমে সীমান্তচৌকিতে হামলার নাটক করে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ত্যাগে বাধ্য করে।

এ সময় ৩ রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে। এতে তিনি ঘটনাস্থলে পড়ে যান। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ‘এমএসএফ’ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিভাগের আরো খবর