আট মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আবার উৎপাদন শুরুর ঘোষণা দিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রতনপুর স্টিল। আগামী সোমবার থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে কোম্পানি।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে দেয়া এক বার্তায় এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় কোম্পানির পক্ষ থেকে।
চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী রোডে প্রতিষ্ঠানটির এমএস রড উৎপাদনের কারখানা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চলতি বছরের শুরুতে বন্ধ হয়ে যায়।
কোম্পানিটির বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ বিভাগ লাইনও কেটে দিয়েছিল। তবে টাকা পরিশোধের পর সেই সংযোগ আবার দেয়া হয়েছে।
আরএসআরএম তার বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, যেসব যন্ত্রাংশ নষ্টের কারণে কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল, সেগুলো চীন থেকে আনা হয়েছে। দেশটির বিশেষায়িত এক প্রকৌশলী সেটি পুনঃস্থাপন করেছেন। ফলে উৎপাদন শুরু করতে আর কোনো বাধা নেই।
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চলতি বছরের শুরুতে আরএসআরএমের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর প্রতিষ্ঠানটির ১৩২/১১ কেভি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী করোনা আক্রান্ত হন। সে সময় সাব-স্টেশনটির জাতীয় গ্রিডের জিআইএস ব্রেকার ও সুইচ গিয়ার নষ্ট হয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে দেশীয় প্রকৌশলীদের দিয়ে সাব-স্টেশন মেরামতের চেষ্টা করলেও তা পারেনি। পরে চীন থেকে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী আনা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
চীনা বিশেষজ্ঞ দলের প্রস্তাব অনুযায়ী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়। কিন্তু দুষ্প্রাপ্য মডেলের যন্ত্রপাতি হওয়ায় বিদেশ থেকে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কয়েক দফায় সময় নেয়ায় উৎপাদন কার্যক্রম পেছাতে থাকে।
উৎপাদন বন্ধের কারণে কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরে বেশ বড় অঙ্কের লোকসান দিয়েছে। এ কারণে শেয়ার মূল্যও কমে গেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৮৯ পয়সা লোকসান দিয়েছে কোম্পানিটি। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বাকি তিন মাসেও উৎপাদন বন্ধ থাকায় এই লোকসান আরও না বাড়লেও কমার কারণ নেই।
এই অবস্থায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে লভ্যাংশ দিতে হলে রিজার্ভ থেকে দিতে হবে।
১০১ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির রিজার্ভ আছে ৩২৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
উৎপাদন বন্ধের খবরে কোম্পানিটির শেয়ার দর এক পর্যায়ে ১৮ টাকা ৪০ পয়সায় নেমে গিয়েছিল।
তবে উৎপাদন আবার চালু হতে পারে, এমন খবরে গত তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২২ টাকা থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
উৎপাদন শুরুর ঘোষণা আসার দিন ১০ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৩৩ টাকা ৩০ পয়সায়। আগের দিনের চেয়ে দাম কমেছে ৪০ পয়সা।
১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি প্রতি বছরই লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। গত বছর সবচেয়ে কম আয় করে সবচেয়ে কম লভ্যাংশ দিয়েছে তারা।
ওই বছর শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৫ পয়সা আয় করে ১ টাকা লভ্যাংশ দেয় তারা। এর আগের দুই বছর লভ্যাংশ ছিল ১ টাকা ২০ পয়সা করে।
এ ছাড়া ২০১৭ সালে ১৭ শতাংশ বোনাস ও ৫ শতাংশ নগদ, তার আগের বছর ১ টাকা নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস এবং ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ২৫ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে ২০ শতাংশ বোনাস ও ৫ শতাংশ নগদ।