চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পদ্মায় ডুবে যাওয়া নৌকায় ছিলেন সাবানা খাতুন। সঙ্গে ছিল তার ৪ মাস বয়সী মেয়ে আশিফা ও বাবা মনিরুল ইসলাম। শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছিলেন তিনি।
পথে পাকা ইউনিয়নের বোগলাউড়ি ঘাটের কিছু দূরে নৌকাটি ডুবে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা শিশুসন্তানকে নিয়ে একটি বস্তা ধরে পদ্মায় ভেসে ছিলেন সাবানা। উদ্ধারকারী দল নৌকা নিয়ে গিয়ে তাদের জীবিত উদ্ধার করে।
শিশুসন্তানসহ বেঁচে ফিরে এসে পদ্মায় ভেসে থাকার অভিজ্ঞতা নিউজবাংলাকে জানান সাবানা।
সাবানার শ্বশুরবাড়ি জেলার ভোলাহাট উপজেলার ছোট জামবাড়িয়া গ্রামে ও বাবার বাড়ি শিবগঞ্জের পাকা ইউনিয়নের কটাপাড়া গ্রামে। বাবার বাড়ি যেতে বোগলাউড়ি ঘাট থেকে নৌকায় পদ্মা পাড়ি দিতে হয়।
বাবা মনিরুল ইসলামের সঙ্গেই বাড়ি যেতে বুধবার মেয়েকে নিয়ে ভোলাহাট থেকে রওনা দেন তিনি।
সাবানা জানান, বোগলাউড়ি ঘাট থেকে বাবা ও মেয়েসহ নৌকায় ওঠেন। ঘাট ছাড়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই নৌকাটি ডুবে যায়। এরপর চিনাবাদামের একটি বস্তা ধরেই মেয়ে আশিফা ও বাবাকে নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টার মতো ভেসে ছিলেন তিনি।
সাবানা বলেন, ‘নৌকা ডুবে যাওয়ার পর, ডুব মেরে যেমন করে উঠে, তেমন করে ছাওয়ালেক (মেয়েকে) লিয়ে উঠে বস্তা ধরছেল্যাম। প্রায় দুই ঘণ্টা এক হাতে বস্তা আরেক হাতে ছাওয়ালেক ধরে রেখেল্যাম। এরপর একটা ডিঙি নৌকা আসল, হামরা সবাই উঠল্যাম।
‘ওই নৌকাও ডুবে যাচ্ছেল (যাচ্ছিল)। তখন নৌকার মাঝি বলেক নৌকাটা ধরে হেলে থাক, বড় নৌকা আসুক। এর খানিকপর বড় নৌকা আসলে নৌকাতে উঠে ঘাটে আসি।
‘এরপর হ্যামার (আমার) ছাওয়াল কেমন হয়্যা (হয়ে) গেছিল। তখন ঘাটে একটা লোক ত্যাল (তেল) দিয়্যা অনেক ল্যাড়া (নাড়াচাড়া) দেয়। একটু চ্যাঠা (চাঙা) হয়। তারপর বাড়ি চল্যা (চলে) আসি। এখন ভালো আছে... তবে হামার আব্বা অনেক পানি খ্যায়া লিয়্যাছে (খেয়ে নিয়েছে)।’
শিবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাকিব আল রাব্বি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নৌকাডুবিতে এখন পর্যন্ত দুইজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। আরও দুইজনের নাম শোনা গেলেও, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা মরদেহ না দেখে তো বলতে পারি না মারা গেছে।’
ইউএনও জানান, মৃত দুইজনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। এখনও নিখোঁজ আছেন নিলুফার, স্বামী খাইরুল ইসলাম ও আসমাউল। তাদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসকর্মী ও স্থানীয়রা নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক ছাবের আলী প্রামাণিক বলেন, ‘গতকাল রাতে যখন আমাদের উদ্ধার অভিযান শেষ হয়, তখন পর্যন্ত ২৬ জন উদ্ধার ও ২ মরদেহ পাওয়া যায়।
তবে সকালে আমরা আরও জীবিত উদ্ধার হওয়ার খবর পেয়েছি। স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জীবিত উদ্ধার সব মিলিয়ে ৩৮ জন। মারা যাওয়ার আরও দুইজনের খবর লোকমুখে শোনা গেলেও তা নিশ্চিত নয়।’