ইউটিউব দেখে অবাস্তবকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন মাদারীপুরের কৃষক বোরহান মীরবহর। গড়ে তুলেছেন সৌদি আরবের খেজুরের বাগান। তার গাছগুলোতে ফল ধরেছে। কিছুদিন পরই হবে খাওয়ার উপযোগী। মরুর সুমিষ্ট খেজুর নিজের আঙিনাতে ফলাতে পেরে খুশির শেষ নেই এই কৃষকের।
এ কাজে বোরহান অভিজ্ঞতা নিয়েছেন ইউটিউব থেকে। চাষাবাদের পদ্ধতি, বীজ থেকে কীভাবে চারা করতে হয় এবং রোপণ করতে হয়- সবই পেয়েছেন এই ভিডিও প্ল্যাটফর্মে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ বিরঙ্গল গ্রামের বোরহান জানান, দীর্ঘদিন তিনি সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে থাকতেই ইউটিউবে বাংলাদেশে খেজুর চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন। বছর দুয়েক আগে দেশে আসার সময় খেজুরবীজ নিয়ে আসেন। সেই বীজ দিয়ে শুরু করেন নার্সারি। গড়ে তোলেন খেজুরবাগান।
অল্প দিনেই সৌদি খেজুরের বাগান করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন বোরহান। তার দেখানো পথে এখন অনেকেই হাঁটছেন।
বোরহানের ৩০ শতাংশ জমির বাগানে গিয়ে দেখা যায়, তার বেশির ভাগ গাছ খেজুর ধরার উপযোগী হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে বাগানের কিছু গাছে মোচা ও খেজুর ধরেছে। বাগানের ঘন সবুজ রং দৃষ্টি কাড়ছে।
২০১৯ সালে সৌদি আরব থেকে বীজ আনেন বোরহান। সেই বীজ থেকে চারা উৎপাদন করেন। নার্সারি থেকে বিক্রি করা হচ্ছে খেজুরের চারাও। মানভেদে প্রতিটি চারার দাম ৫০০-১৫০০ টাকা। বর্তমানে তার নার্সারিতে ৫ শতাধিক খেজুরের চারা রয়েছে।
পাশাপাশি অন্যান্য ফলের নার্সারিও করেছেন বোরহান।
যে খেজুর সৌদিতে চাষ হয়, সেই খেজুর চাষ হচ্ছে মাদারীপুরে। এই দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন অনেকে দূর থেকে ছুটে আসেন বোরহানের বাগানে।
এতে গ্রামের আরও কৃষক খেজুর চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। অনেকেই চারা নিচ্ছেন বাগান করার জন্য।
আব্দুর রহমান বেপারী নামের একজন বলেন, ‘আমরা দেশের মাটিতে কখনও বিদেশি খেজুর চাষ দেখিনি। এবারই প্রথম দেখলাম। তিনি যদি খেজুর চাষে সফল হন, তাহলে আমরাও খেজুর চাষ করব। বিদেশে গিয়ে গাধার মতো কাজ না করে দেশে কাজ করব।’
বোরহান বলেন, ‘মানুষের ইচ্ছা ও পরিশ্রম তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে। সে উদ্যম নিয়েই নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কৃষি বিভাগ আরও সহযোগিতা করলে ব্যাপক পরিসরে খেজুর চাষ ছড়িয়ে দেয়া যাবে।’
‘এখন আর বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। এ দেশের মাটিতে বিদেশি ফল ফলিয়ে আয় করা সম্ভব। বিদেশে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করার কোনো অর্থ হয় না’, যোগ করেন বোরহান।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘মাদারীপুরে প্রথমে একজন চাষি বিদেশি খেজুর চাষ করেছেন। তার দেখাদেখি আরও কয়েকজন খেজুর চাষ করছেন। তাদের গাছে খেজুরও ধরেছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করব এবং এই খেজুর চাষ সম্প্রসারণের জন্য কাজ করব।'
মাদারীপুরসহ সারা দেশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে এই খেজুরের চাষ হলে বেকারত্ব দূর করবে বলেও দাবি স্থানীয় লোকজনের।