কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে গুলিতে নিহত হয়েছেন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ।
বুধবার রাত পৌনে ৯টার দিকে উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই ঘটনা ঘটে।
মুহিবুল্লাহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ১৪ এপিবিএন পুলিশের অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গারা জানান, লম্বাশিয়া ক্যাম্প ওয়ান ওয়েস্টে তার বাসার সামনে প্রতিদিনের অফিস করছিলেন। ওই সময় হঠাৎ একদল লোক এসে তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়।
পরে অন্যরা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের মৃতদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এপিবিএন জানায়, অজ্ঞাতব্যক্তিরা ৫ রাউন্ড গুলি ছুড়ে, যার তিনটিই মুহিবুল্লাহর বুকে লাগে।
এই ঘটনা পর ক্যাম্প এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান নাইমুল হক।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ (সবার ডানে)।রোহিঙ্গাদের যত সংগঠন ও নেতা রয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম এই মুহিবুল্লাহ। তিনি রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে গড়ে তুলেছেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানরাইটস।
এই সংগঠনের নেতা হিসেবে তিনি মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে রোহিঙ্গাদের হয়ে কথা বলেছেন বিশ্বদরবারে।
তবে তিনি বেশি আলোচনায় আসেন ২০১৯ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে। এরপর বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করলে তিনি তার বিরোধিতা করে প্রত্যাবাসন আটকে দেন।
কে এই মুহিবুল্লাহরোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ ১৯৯২ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তখন থেকেই টেকনাফ অঞ্চলে অবস্থান নিয়ে নানাভাবে রোহিঙ্গাদের সংগঠিত করতে থাকেন।
মুহিবুল্লাহ ২০০০ সালের শুরুতে ১৫ জন সদস্য নিয়ে গড়ে তোলেন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানরাইটস’ নামের সংগঠন, যা এআরএসপিএইচ নামে বেশি পরিচিত। অন্যদেশের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশি মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গেও গড়ে তোলেন গভীর যোগাযোগ। ধীরে ধীরে মুহিবুল্লাহ হয়ে ওঠেন প্রধান পাঁচ রোহিঙ্গা নেতার একজন।
বিদেশিদের কাছে আগে থেকে পরিচিত হলেও ২০১৭ সালে তিনি বনে যান রোহিঙ্গাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সে সময় কয়েক লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে তাদের যোগাযোগে ভূমিকা রাখতে থাকেন নিয়মিত।
মুহিবুল্লাহ কয়েক দফায় সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন। তার উত্থানে সহায়ক হয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ২০১৮ সালে ইউএনএইচসিআরকে সংযুক্ত করার ঘটনা।
ইংরেজি ভাষা জানা ও রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের দক্ষতা মুহিবুল্লাহকে ধীরে ধীরে বিদেশিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিদেশি প্রতিনিধিরা যখনই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছেন, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি হিসেবে মুহিবুল্লাহ যোগ হয়েছেন। তার সঙ্গীদেরকেও প্রতিনিধি করেন।
মূলত বিদেশি সংস্থা ও সংগঠনগুলো দেশে ফেরার বিষয়ে যখন রোহিঙ্গাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছে তখনই মুহিবুল্লাহর সংগঠন এআরএসপিএইচ ভিন্ন কাজ করেছে। তারা ক্যাম্পে নানা প্রচারনা চালিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করেন এবং প্রত্যাবাসনে বাধার চেষ্টা চালিয়ে যান। কয়েক দফায় বিক্ষোভের আয়োজন করেন।
মুহিবুল্লাহ এক পর্যায়ে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংলাপের প্রস্তাব দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ১৭ দেশের যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৭ প্রতিনিধি সাক্ষাৎ করেছিলেন সেখানেও যোগ দিয়েছিলেন মুহিবুল্লাহ।