১ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও এবার শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দেশের আট বিভাগের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আট বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রশ্ন ফাঁস বা জালিয়াতির সম্ভাবনা থাকলেও এসব রোধে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম ঢাকার বাইরে আমাদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমাদের সবার জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ এবং নতুন অভিজ্ঞতা। তবে এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের অনিয়ম, জালিয়াতি প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি থাকবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদা তৎপর রয়েছে।’
ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন ভার্চুয়্যাল ক্লাসরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন উপাচার্য আখতারুজ্জামন।
পরীক্ষায় জালিয়াতি এবং অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে গণমাধ্যমকর্মীদেরও সহযোগিতা চান উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনাদের কাছে যদি কোন তথ্য থাকে তাহলে আমাদের জানাবেন। বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে খুবই দ্রুততম সময়ে বিষয়গুলো মোকাবিলা করবে। অসাধু এবং জালিয়তি চক্রকে রোধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
উপাচার্য জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকার বাইরের সাতটি বিভাগীয় শহরে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের নেতৃত্বে প্রোক্টরিয়াল টিম সর্বোচ্চ নজরদারি রাখবে।
সংবাদ সম্মেলনে ‘ক’ ইউনিটের সমন্বয়ক ও জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা, ‘খ’ ইউটের সমন্বয়ক ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, ‘গ’ ইউনিটের সমন্বয়ক ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল মঈন, ‘ঘ’ ইউনিটের সমন্বয়ক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী উপস্থিত ছিলেন।
ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র
ঢাকা বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহীর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশালের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল ১১টা থেকে একযোগে শুরু হবে পরীক্ষা। চলবে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাঁচ ইউনিট মিলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্র সমূহে ভর্তিচ্ছু মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬০৬ জন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬ হাজার ১০১, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ হাজার ৪৬৯, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২ হাজার ৫৬৮, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ হাজার ১২৬, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ হাজার ৯১, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ হাজার ৬৭ এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ হাজার ৩১২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেন কম সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারে, অর্থ সাশ্রয় হয় ও ভোগান্তি লাঘব হয় সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখে ৭টি বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে সভা করে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছিলাম। তারা আমাদের সহযোগিতা করবেন।’
সূচি অনুযায়ী- ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ক ইউনিটের পরীক্ষা। পরদিন ২ অক্টোবর কলা অনুষদভুক্ত খ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত গ ইউনিটের পরীক্ষা ২২ অক্টোবর এবং সামাজিক বিজ্ঞানভুক্ত ঘ ইউনিটের পরীক্ষা ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। চারুকলা অনুষদভুক্ত চ ইউনিটের সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৯ অক্টোবর।
ক, খ, গ ও ঘ ইউনিটে বহুনির্বাচনী ও লিখিত পরীক্ষা হবে। বহুনির্বাচনী পরীক্ষা হবে ৬০ নম্বরে ও লিখিত পরীক্ষা হবে ৪০ নম্বরে। শুধুমাত্র চ ইউনিটে ৪০ নম্বরের সাধারণ জ্ঞান ও ৬০ নম্বরের অংকন পরীক্ষা নেওয়া হবে।
আসনপ্রতি কতজন
২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ৫টি ইউনিটে মোট ৭ হাজার ১৪৮টি আসন রয়েছে। এসব সিটের বিপরীতে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩৪০ জন প্রার্থী। সে হিসেবে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি আসনের বিপরীতে ৪৫ জন শিক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।