গ্রিনফিল্ড বা এখনও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে আসেনি এমন কোম্পানিকেও পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনের সুযোগ দিতে তৈরি করা হয়েছে এসএমই প্ল্যাটফর্ম।
২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল ডিএসই এসএমই প্লাটফর্ম উদ্বোধন করলেও আড়াই বছরে লেনদেন শুরু করতে পারেনি। তবে এরই মধ্যে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি পাঁচটি স্বল্প মূলধনি কোম্পানিকে অনুমোদন দিয়েছে।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করা হবে এসএমই প্ল্যাটফর্ম। যেখানে লেনদেনে জন্য পুঁজিবাজারের প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তবে কোনো ব্যাক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীর পুঁজিবাজারে এক কোটি টাকা বা তার বেশি বিনিয়োগ থাকলে তিনিও এ মার্কেটে লেনদেন করতে পারবেন।
এদিন ডিএসই চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান-এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএসইসি কমিশনার মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি থাকবেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান।
যদি কোনো সাধারণ বিনিয়োগকারী এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেন করতে চান, তাহলে ওটিসি মার্কেট থেকে আসা কোম্পানিগুলোর শেয়ার শুধু শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন।
এমন কয়েকটি বিষয়কে সামনে এসে মঙ্গলবার ডিএসই বলছে, ইলেকিট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেমের অধীনে নিবন্ধিত যোগ্য বিনিয়োগকারীদের ডিএসই এসএমই প্ল্যাটফর্মের অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হবে। যদি যোগ্য বিনিয়াগকারীদের ছাড়া অন্য কোনো বিনিয়োগকারী ডিএসই এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার থাকে, তবে তিনি শুধু শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন।
মূল মার্কেটে যেমন বিভিন্ন কোম্পানির খাতভিত্তিক ভাগ করা থাকে, এখানে কোনো বিভাগ থাকবে না। তবে এই মার্কেটের কোম্পানিগুলোকে চিহিৃত করতে কোম্পানির নামের শেষে ‘এস‘ লেখা থাকবে।
লেনদেনে নিষ্পত্তির জন্য মূল মার্কেটের ‘এ’ ক্যাটাগরির বিধান প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ টি-টু সময় বা শেয়ার কেনার একদিন পর বিক্রিযোগ্য হবে।
প্রধান বোর্ডের অধীনে ‘জেড’ বিভাগ বাদে মূল বোর্ড এবং ডিএসই এসএমই প্ল্যাটফর্মের সিকিউরিটিজের মধ্যে মান সমন্বয় সুবিধা (নেটিং) প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ যোগ্য বিনিয়োগাকরীরা লেনদেন শুরু আগে যে লিমিট নেন এবং লেনদেন শেষ হওয়ার পর লিমিট অবশিষ্ট থাকলে সেটি ফেরত দেয়া হবে।
ডিএসই এসএমই প্ল্যাটফর্মের সব শেয়ার মার্জিনযোগ্য হবে। অর্থাৎ এই শেয়ারের এবং লেনদেন ফি, এআইটি (অগ্রীম কর) ডিএসইর মূল বোর্ডের মতো হবে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসএমই প্ল্যাট ফর্মে সাধারণ বিনিয়োগকারীদরে সম্পৃক্ত না করা একদিকে ভালো হয়েছে। কারণ, এখানে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করবে। এ মুহূর্তে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে পুঁজিবাজারের প্রাণ হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারী। তাদের বাদ দিয়ে আলাদা যতই প্লাট ফর্ম করা হোক না কেন, সেটি জনপ্রিয় করা সম্ভব নয়।
‘এক সময় দেখা যাবে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকেই সাধারন বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ত করারও দাবি উঠবে।’
অনুমোদন দেয়া হয়েছে যেগুলোর
নিয়ালকো এলয়েজ
এসএমই খাতে প্রথম কোম্পানি নিয়ালকো এলয়েজ লিমিটেডকে অনুমোদন দেয়া হয় ১৫ এপ্রিল। বিএসইসির ৭৭০তম কমিশন সভায় কোম্পানিটিকে অনুমোদন দেয়া হয়। যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কোম্পানিটি ৭৫ লাখ শেয়ার বরাদ্দ করবে। শেয়ার ছাড়া হবে ৭ কোটি ৫০ লাখ।
উত্তোলিত অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি ভূমি উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করবে।
কোম্পানিটির ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ সময়ে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৯১ পয়সা।
মোস্তফা মেটাল
বিএসইসির ৭৮০তম কমিশন সভায় মোস্তফা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজকে ১১ কোটি টাকা তোলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ১ কোটি ১০ লাখ শেয়ার বিক্রির অনুমোদন দেয়া হয়। পুঁজিবাজারের যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে এই পরিমাণ শেয়ার বরাদ্দ করবে মোস্তফা মেটাল।
উত্তোলিত অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি ব্যাংক ঋণ পরিশোধ, কার্যকরী মূলধন এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনা খরচ খাতে ব্যয় করবে।
তবে অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিএসইসি কোম্পানিটিকে শর্ত দিয়েছে, এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেনের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন বছর ইস্যুয়ার কোম্পানি কোনো বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারবে না।
অরিজা এগ্রো
কোম্পানিটিও প্রাতিষ্ঠানিক বা যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ১ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১০ কোটি টাকা তোলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসএমই প্ল্যাট ফর্মে অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে উত্তোলন করা টাকায় কোম্পানিটি ব্যাংক ঋণ পরিশোধ, কার্যকরী মূলধন এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করবে।
গত ৩০ ডিসেম্বর সমাপ্ত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ০২ পয়সা। এই কোম্পানিটির এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেনের তারিখ থেকে পরবর্তী ৩ বছর ইস্যুয়ার কোম্পানি কোনো বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারবে না।
মাস্টার ফিড এগ্রোটেক
কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ১ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। উত্তোলিত অর্থে কোম্পানির কার্যকরী মূলধন এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করা হবে।
গত ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬৮ পয়সা।
কৃষিবিদ ফিড
কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ২ কোটি ২০ লাখ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২২ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এই টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ, কারখানা ভবন নির্মাণ, যন্ত্রপাতি ক্রয়, ডিজেল জেনারেটর ক্রয়, ডেলিভারি ভ্যান ক্রয় এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনা খরচ খাতে ব্যয় করবে কোম্পানিটি।
৩০ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ১ টাকা ৬৭ পয়সা।
ওটিসি থেকে এসএমই বোর্ডে যাচ্ছে যেগুলো
ওটিসিতে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৩টি যাবে এসএমই বোর্ডে। এর মধ্যে ৭টি উৎপাদনে আছে, বন্ধ আছে ১৬টির উৎপাদন।
এপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস, বাংলাদেশ হোটেল লিমিটেড, বেঙ্গল বিস্কুট লিমিটেড, গচিহাটা এগ্রিকালচারাল, হিমাদ্রী লিমেটড, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়স, ইউসুফ ফ্লোর মিলস।
উৎপাদনে না থাকা ১৬ কোম্পানির মধ্যে আছে আল আমীন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিস, আলফা ট্যোবাকো, আমান সি ফুড, আশরাফ টেক্সটাইল মিলস, বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক্স মিটার কোম্পানি, বাংলাদেশ লিফ ট্যোবাকো কোম্পানি, বেঙ্গল ফাইন সিরামিক, বায়োনিক সি ফুড এক্সপোর্ট, ঢাকা ফিশারিজ, লেক্সকো লিমিটেড, মেঘনা শিম্প কালচার লিমিটেড, রাসপিড ডাটা ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেলিকম, রাঙ্গামাটি ফুড, থ্যারাপিউটিস (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও জাগো কররেশন।