২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদৎ বার্ষিকীর দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হাতে লেখা একটি চিঠি পৌঁছে।
চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীর ওপর একটি সেতু তৈরি করে দেয়ার আবদার করে পটুয়াখালী সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস।
দেশজুড়ে আলোচিত হয় সেই চিঠি। প্রধানমন্ত্রীও সাড়া দেন ক্ষুদে এই নাগরিকের আব্দারে। সে বছরের ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষেন্দুর চিঠির জবাব দেন চিঠিতেই, আশ্বাস দেন সেতু নির্মাণের।
এরপর ২০২০ সালের ১০ মার্চ একনেকে অনুমোদিত হয় ‘কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প।
কচুয়া-বেতাগি সেতু এলাকা পরিদর্শন করে বুধবার বিকালে সেতু বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক জানিয়েছেন, শীর্ষেন্দুর আবদারের সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হবে শিগগিরি।
তিনি বলেন, ‘পায়রা নদীর উপর এই সেতুর জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াসহ সেতুর অবকাঠামো নির্মাণের কাজ খুব শিগগিরি শুরু হবে। ইতোমধ্যে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। সেটি এখন মূল্যায়নের অপেক্ষায় আছে। মূল্যায়ন কমিটি প্রতিবেদন দিলেই ঠিকাদার কাজ শুরু করবে।
‘সেতুটি প্রধানমন্ত্রীর উপহার। এই সেতুর মধ্য দিয়ে মির্জাগঞ্জ ও পটুয়াখালীবাসীর সেতুবন্ধন হবে।’
যা বলছে শীর্ষেন্দুর পরিবার
ক্ষুদে পত্রলেখক শীর্ষেন্দু এখন পড়ে নবম শ্রেণিতে
ক্ষুদে সেই পত্রলেখক এখন পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। তার মা শীলা রানী পটুয়াখালী সমবায় অধিদপ্তরের কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর আর বাবা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস কাজ করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে।
বাবার-মায়ের চাকরির সুবাদে পটুয়াখালী শহরে বসবাস করলেও শীর্ষেন্দুদের নিয়মিতই আনাগোনা থাকে তাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের ছয়আনি গ্রামে। সেখানে থাকেন শীর্ষেন্দুর দাদু বীর মুক্তিযোদ্ধা অবিনাস সন্নামত।
শীর্ষেন্দুর মা শিলা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অফিসে সত্যিই যে তার ছেলের চিঠিটি যাবে আর তিনিও জবাব দেবেন সেটা এখনও বিশ্বাস হয় না। স্বপ্নেও তা ভাবিনি। আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। আমরা তো খুশিই, এলাকার লোকজনও খুব খুশি।’
কী ছিল শীর্ষেন্দুর চিঠিতে?
শীর্ষেন্দুর ওই চিঠিটি ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট পৌঁছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। তাতে শীর্ষেন্দু লেখে, ‘আমি পটুয়াখালী গভ. হাই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর একজন নিয়মিত ছাত্র। আমার দাদু অবিনাস সন্নামত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি আপনার পিতার মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর শৈশব কাল নিয়ে রচনা লিখে তৃতীয় স্থান অধিকার করি।
‘আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি। আমাদের মির্জাগঞ্জ নদী পার হয়ে যেতে হয়... ঐ নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ... কখনো নৌকা ডুবে যায়, কখনো কখনো ট্রলার ডুবে যায়।’
চিঠিতে শীর্ষেন্দু জানায়, এসব দুর্ঘটনায় অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। সে তার বাবা-মাকে হারাতে চায় না, কারণ সে তাদের খুব ভালোবাসে।
‘তাই আমাদের জন্য মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি ব্রিজ তৈরির ব্যবস্থা করুন।’
চিঠির উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেখেন, ‘স্নেহের শীর্ষেন্দু, তোমার চিঠি পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি জানি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীটি অত্যন্ত খরস্রোতা। নিজের পিতা-মাতাসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই নদীকেন্দ্রিক তোমার নিরাপত্তা সচেতনতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তোমাকে আশ্বস্ত করছি।’
প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি সে বছরের ২০ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান খানের হাতে পৌঁছায়। সেটি পরে আনুষ্ঠানিকভাবে শীর্ষেন্দুর হাতে তুলে দেয়া হয়।
একনেকে অনুমোদন
২০২০ সালের ১০ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীর ওপর ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবিত এই সেতুটি হবে দুই লেনের। মূল সেতু ১ হাজার ৩৭৫ মিটার দীর্ঘ ও ১০ দশমিক ৭৬ মিটার চওড়া।
পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর মো. কামরুল হাসান জানান, ২০২৫ সালের মধ্যে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে।