প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা শপিংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসারসহ (সিওও) তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেন র্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-২-এর সদস্যরা।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন ধামাকার সিওও সিরাজুল ইসলাম রানা, ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল বিভাগের প্রধান ইমতিয়াজ হাসান সবুজ ও ইলেকট্রনিকস বিভাগের প্রধান ইব্রাহিম স্বপন।
র্যাবের কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে বুধবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, এক ভুক্তভোগী ২৩ সেপ্টেম্বর টঙ্গী পশ্চিম থানায় ধামাকার চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিওওসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন।
পরে আরও কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করায় ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধামাকা শপিংয়ের মালিকসহ মামলার অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান কমান্ডার।
গ্রেপ্তার তিন কর্মকর্তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব কমান্ডার জানান, ই-কমার্স সাইট ধামাকার ব্যবসা পরিচালনাসংক্রান্ত কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এমনকি ট্রেড লাইসেন্স বা টিন সার্টিফিকেটও নেই। কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টও ছিল না।
‘ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে ও ওই প্রতিষ্ঠানের নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তারা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কমান্ডার বলেন, ২০১৮ সালে শুরু হওয়া ‘ধামাকা ডিজিটাল’ ২০২০ সালে এসে ‘ধামাকা শপিং ডট কম’ নাম ধারণ করে। প্রথম কয়েক মাস তারা ঠিকঠাক ব্যবসা করলেও গত বছরের অক্টোবর থেকে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা থেকে বিভিন্ন অফার সাজাতে থাকে।
অফারের মাধ্যমে তিন লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ধামাকা। এই টাকার বড় অংশ ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরিয়ে নেয় ধামাকার মালিক-কর্মকর্তারা।
তিনি আরও বলেন, বিপুল অর্থ সরিয়ে ফেলায় গ্রাহক, ভেন্ডরসহ সবার টাকা বকেয়া পড়তে থাকে। বর্তমানে সেলার বা ভেন্ডর বাবদ বকেয়া রয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ কোটি টাকা, গ্রাহকদের বকেয়া প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন বলেন, গত কয়েক মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটির অফিসের ভাড়া, ওয়্যারহাউস এমনকি কর্মচারীদেরও বেতন দেয়নি ধামাকার মালিকপক্ষ। গেল এপ্রিল মাসে হঠাৎ করে সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় তারা। তখন থেকেই এর গ্রাহক ও ভেন্ডররা পণ্য বা টাকা কিছুই পাচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে ধামাকার মালিকদের প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত ১৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অ্যাকাউন্টগুলোতে এখন মাত্র ১ লাখ টাকা আছে। গ্রাহকদের টাকার বড় অংশ পাচার করায় সিআইডি তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করেছে।
শূন্য বিনিয়োগে গ্রাহকদের টাকা লুটের পরিকল্পনায় ধামাকার সৃষ্টি
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন বলেন, ধামাকা শপিংয়ের প্রধান কার্যালয় ছিল মহাখালীতে। তেজগাঁও বটতলা মোড়ে একটি ডেলিভারি হাব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩০০টি ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক চেইন তৈরি করেছিল।
ধামাকার মালিকদের অন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড, মাইক্রোট্রেড ফুড ও বেভারেজ লিমিটেড এবং মাইক্রোট্রেড আইসিক্স লিমিটেড।
তিনি বলেন, মূলত ভেন্ডর ও গ্রাহক চেইন নেটওয়ার্ক থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন মালিকরা। ইনভেনটরি জিরো মডেল এবং হোল্ড মানি প্রসেস অনুসরণ করে বিনা বিনিয়োগে গ্রাহকদের টাকা আটকে রেখে আত্মসাতের পরিকল্পনা করেছিলেন তারা।
বিশাল অফার ও ছাড় দিয়ে সাধারণ জনগণকে প্রলুব্ধ করা হতো। গ্রাহকদের অফারের ফাঁদে ফেলে টাকা আত্মসাৎ করে নেয় ই-কমার্স সাইট ধামাকা।