চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মৃত্যুর পর বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে সেই উন্মুক্ত নালা।
ওই নালার উন্মুক্ত অংশে মঙ্গলবার সকাল থেকে বাঁশের বেড়া দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে ছোট একটা ড্রেনের ওপর স্লাব বসিয়ে পথচারীদের জন্য ফুটপাত তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ফুটপাতটি নালার ওপর গিয়ে একটি স্লাব খালি রয়ে গেছে। এতে নালাটি উন্মুক্ত থাকলে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে এগোলেই একটু অসতর্ক থাকলে নালায় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইয়ামিন আলম নামের স্থানীয় এক দোকানদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাদিয়ার আগেও গত পাঁচ দিনে অন্তত পাঁচজন ওই নালায় পড়ে আহত হয়েছেন। তবে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এত মানুষ পড়ে যাওয়ার পরও কারও কোনো টনক নড়েনি। একটা প্রাণ চলে যাওয়ার পর অবশেষে এখানে বেড়া দেয়া হয়েছে। এখন বেড়া দিলেও কি, যে মায়ের বুক খালি হলো, তার সন্তান কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে?’
বাদামতল এলাকার আবদুল্লাহ আবছার নামের এক রিকশাচালক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন মানুষ নালাত পড়ে। মাইয়ে ইবে পরিবের দুদিন আগেও আরোগগো (আরেকজন) মাইয়ে (মেয়ে) পইজ্জিল (পড়েছিল), আঁরা (আমরা) উদ্দো (তাকে) ধরি-টরি তুলি দিলাম।’
সোমবার রাতে ওই নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়ার মৃত্যুর পরদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সব দায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ওপর চাপিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম।
এ সময় তিনি বলেন, ‘অবহেলার জন্য, অসতর্কতার জন্য এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। নালার পাশে ফেন্সিং (নিরাপত্তা বেষ্টনী) থাকলে দুর্ঘটনা ঘটত না। সিটি করপোরেশনের রেলিং ছিল নালার ওপরে। স্লাব ছিল। সিডিএ কাজ করতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলছে। কিন্তু পরে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়নি। তাই দুর্ঘটনা ঘটছে।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো কাজ করছি এই দুবছর ধরে। কই, এর আগেও তো সেখানে স্লাব ছিল না, রাস্তায় বাতি ছিল না, নালা উন্মুক্ত আর ময়লায় ভরা ছিল। আসলে তারা শুধু সিডিএর দোষ খুঁজতেই ব্যস্ত। তবে যা ঘটেছে তা খুবই মর্মান্তিক। এই ঘটনা আমাদের সবাইকে নাড়া দিয়েছে। এখন সেনাবাহিনী কাজ করছে, আমরা সেনাবাহিনীকে বলে দেব উন্মুক্ত নালাগুলোতে রেলিং বসিয়ে দেয়ার জন্য।’
এর আগে সোমবার রাত ১০টার দিকে নগরীর আগ্রাবাদের মাজার গেট এলাকায় অসাবধানতাবশত ড্রেনে পড়ে নিখোঁজ হন শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া।
খবর পেয়ে সোয়া ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় রাত পৌনে ৩টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে সাদিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।