বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জবির মাঠে ডিএসসিসির মার্কেট, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

  •    
  • ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১২:০৮

বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা ট্রেজারার ও ক্রীড়া কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলেছে সেটি জেনেছি। আমরা আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার কথা  ভাবছি। উপাচার্য ৯ অক্টোবর দেশে আসবেন, তার সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। এখন আমাদের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার আছেন, তার সঙ্গেও পরামর্শ করব।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র খেলার মাঠ ধূপখোলায় মাটি খননের কাজ শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। মার্কেট ও পার্ক নির্মাণের জন্য গভীর রাতেও জোরেশোরে চলছে খনন।

বিষয়টি নজরে আসার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ধূপখোলা মাঠের আয়তন প্রায় ৭ দশমিক ৪৭ একর এবং মাঠটি তিন ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ, ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব খেলার মাঠ এবং সবার জন্য উন্মুক্ত একটি মাঠ। ১৯৮২ সাল থেকে মাঠটি ব্যবহার করছে জবি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে না জানিয়েই মাঠে মাটি খননের কাজ করছে ডিএসসিসি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ধূপখোলা মাঠটি সিটি করপোরেশনের। এ মাঠ এখন মেগা প্রজেক্টের মধ্যে রয়েছে। এখানে একটি বহুতল মার্কেট, খেলার মাঠ, হাঁটার ব্যবস্থা, ক্যাফেটরিয়া ও পার্কিং স্থান করা হবে বলে জানায় সূত্রটি।

স্থানীয়রা জানান, রোববার ও সোমবার মধ্যরাতে ধূপখোলা মাঠের জবি অংশে সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলেছে মাঠের সংস্কারের দায়িত্বে থাকা ডিএসসিসির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো মাঠটির তিনটি অংশের প্রতিটির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে। মাঠের দুই পাশে থাকা দুটি গোল পোস্টও তুলে ফেলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশের গেটের সামনে ফেলা হয়েছে খোঁড়াখুঁড়ির মাটিও। এতে গেটটি বন্ধ হয়ে গেছে।

জবির পাশে সীমানাপ্রাচীর ভেঙে চলছে মাটি খননের কাজ।

এ সময় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাঠটি জবি শিক্ষার্থীদের একমাত্র খেলার জায়গা। যদিও এটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং ডিএসসিসির ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের খেলা এখানে অনুষ্ঠিত হয়। এ মাঠেই ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সমাবর্তন। ডিএসসিসির এ প্রজেক্টের কারণে একমাত্র খেলার মাঠ বেহাত হওয়ায় ক্ষুব্ধ জবির সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা। মাঠ রক্ষায় কয়েক দফা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এরই মাঝে তারা ফেসবুকে একটি গ্রুপ (জবিয়ান, মাঠ বাঁচাও) খুলে সেখানে সকলকে একত্রে করার চেষ্টা করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. লিমন ফুটবলার ও সেরা অ্যাথলেট।

নতুন করে ডিএসসিসি সীমানাপ্রাচীর তুলছে।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘জবির একমাত্র খেলার মাঠ, বিশ্ববিদ্যালয়েরই থাকতে হবে। খেলার মাঠের প্রয়োজনীয়তা আপনার আমার সবার জানা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এলাকার লোকজনও এখানে খেলাধুলা করেন। তাই বৃহত্তর স্বার্থে মাঠটি রক্ষা করা অপরিহার্য।

‘খেলার মাঠের জায়গায় বহুতল শপিং মল কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বহুতল শপিং মল বানানো যদি উন্নয়ন হয় তাহলে কয়েক বছর পর প্রতিটা খেলার মাঠে আমরা এ ধরনের মার্কেট দেখতে যাচ্ছি- যা কখনোই নীতিসংগত নয়।’

১১তম ব্যাচের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভলিবল টিমের ক্যাপ্টেন হৈমন্তী রাণী ক্ষোভ প্রকাশ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শকুনের চোখ পড়েছে সব ভালো কিছুতে। পুরান ঢাকায় নিঃশ্বাস নেয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। অথচ এই একটা মাঠ ছিল সেটিও নিয়ে যাচ্ছে। সামনের প্রজন্ম শুধু বই থেকেই জানবে ‘মাঠ’ কাকে বলে।’

ডিএসসিসির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মাঠ রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগের কথা ভাবছে তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষাকেন্দ্রের সহকারী পরিচালক গৌতম কুমার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ধূপখোলায় তিনটির পরিবর্তে একটি মাঠ নির্মাণ করতে চাইছে। এতে কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। আমাদের স্বকীয়তা হারিয়ে যাবে এবং আমাদের খেলাধুলা বাধাগ্রস্ত হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘মাঠটির কোনো কাগজপত্র আমাদের কাছে নেই। এর আগেও আমরা মাঠটি রক্ষার চেষ্টা করেছি৷ মাঠের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে, প্রয়োজনে আবারও পাঠানো হবে।’

জবির একমাত্র খেলার মাঠে শুরু হয়েছে ভবন নির্মাণের কাজ।

মাঠটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবহারের জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার কথা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা ট্রেজারার ও ক্রীড়া কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলেছে সেটি জেনেছি। আমরা আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার কথা ভাবছি। উপাচার্য ৯ অক্টোবর দেশে আসবেন, তার সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। এখন আমাদের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার আছেন, তার সঙ্গেও পরামর্শ করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাঠের বিষয়ে মেয়রের সঙ্গে দেখা করেছি, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। মেয়রকে বলেছিলাম, জবি ক্যাম্পাস কেরানীগঞ্জে যাওয়া পর্যন্ত মাঠটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবহার করতে দিতে। তিনি না করেছেন। আমাদের ডকুমেন্টস না থাকায় বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।’

সিটি করপোরেশনের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ও প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা হরিদাস মল্লিক বলেন, ‌‘‍‌মাঠের উন্নয়নে আমরা কাজ শুরু করেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি সিটি করপোরেশনের মাঠ। তাই আমরা কাজ শুরু করেছি।’

এর আগে গত ২১ জুন খেলার মাঠের চলমান সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বৈঠক শেষে জানান, মাঠের সংস্কার হলেও শিক্ষার্থীরা খেলতে পারবেন। কিন্তু এখন সে কথা রাখছেন না মেয়র। তার এ আশ্বাসকে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠটির আয়তন প্রায় ২১ বিঘা। এ মাঠে খেলেই তৈরি হয়েছিলেন জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন নামীদামি ফুটবলার-ক্রিকেটার। এ মাঠে মার্কেট নির্মাণের জন্য গত ১০ জুন ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জোহা ও সিটি করপোরেশনের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হরিদাস মল্লিক ম্যাপ অনুযায়ী মাঠের চার কোনায় খুঁটি বসিয়ে এর দখল নেন। এরপরই তারা প্রকল্পের কাজ শুরু করেন।

জানা যায়, ডিএসসিসি এলাকায় মোট নয়টি মাঠ রয়েছে। এর মধ্যে আগা সাদেক রোডের বাংলাদেশ মাঠ, লালবাগ শ্মশানঘাট মাঠ, কিল্লার মোড় মাঠ, বেগমগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, গোলাপবাগ মাঠ পড়েছে পুরান ঢাকা এলাকায়।

এ বিভাগের আরো খবর