বিগত এক দশকে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণের উন্নতি খুবই ধীর বলে উঠে এসেছে এক গবেষণা প্রতিবেদনে। এতে দেখা যায়, দেশের ৮০ শতাংশ পুরুষ শ্রমবাজারে অংশ নেন, নারীর ক্ষেত্রে এই হার ৩৬ শতাংশ। জনমিতির সুবিধা গ্রহণ করে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে এ বিষয়ে উন্নতি প্রয়োজন।
মঙ্গলবার সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট: বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ চিত্র তুলে ধরা হয়।
সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী ইশরাত শারমীনের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বিদিশা।
সেলিম রায়হান বলেন, ‘বাংলাদেশে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার নিশ্চিতে উদ্যোগ রয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও জাতীয় বাজেটসহ বিভিন্ন নীতিতে তার স্বীকৃতি রয়েছে। কিন্তু এই নীতিগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সেটি গুরত্বপূর্ণ বিষয়।’
মূল প্রবন্ধে সায়মা হক বিদিশা বলেন, উচ্চশিক্ষা, কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা, প্রযুক্তিগত বিভাজন, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, বাল্যবিবাহসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অবস্থানের উন্নয়ন প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যেসব মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার বাজেটের বরাদ্দ বেশি তার একটি বড় অংশের মোট বরাদ্দ কম হওয়া এবং তাদের বাস্তবায়নের সক্ষমতা কম থাকা বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
সায়মা হক বিদিশা তার উপস্থাপনায় বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনায় জেন্ডার বাজেট কতোটা প্রতিফলিত হয়েছে তা মূল্যায়ন করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার সংবেদনশীলতা নির্ণয়ের জন্য একটি আলাদা সেল থাকা প্রয়োজন।
উন্নয়ন প্রকল্পের জেন্ডার সংবেদনশীলতা যাচাই বাছাই বাধ্যতামূলক করার পরামর্শও দেন তিনি। সেই সঙ্গে সরাসরি জেন্ডার নির্দিষ্ট প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো, জেন্ডার অডিটিং, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় ও প্রকল্পগুলোর প্রভাব বিশ্লেষণের উপর জোর দেন।
সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সেলিমা আহমেদ তৃণমূলের নারীদের কাছে বাজেট বরাদ্দের সুবিধা পৌঁছে দেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির কারণে তৃণমূল পর্যায়ের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। বাজেট বরাদ্দ থাকলেও তৃণমূলের নারীদের তা কতটা প্রভাবিত করে তা মূল্যায়ন করতে হবে।’
ব্র্যাক ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের অপারেশন্স লিড সামাঞ্জার চৌধুরী বলেন, ‘নারী শিশুর পাশাপাশি ছেলে শিশুরাও শিক্ষাঙ্গন থেকে ঝরে পড়ছে, সেই সঙ্গে বেড়ে গেছে শিশুশ্রম। এ বিষয়ে বাড়তি মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।
‘কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়ন এক বিষয় নয়। অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর ভূমিকা বাড়াতে হবে। তবেই নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি বলেন, ‘জলবায়ু অর্থায়নে জেন্ডার বিভাজিত তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যে সকল প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে সেগুলোকে জেন্ডার সংবেদনশীল করতে হবে।’