আদালতের আদেশে অনিবন্ধিত নিউজপোর্টাল বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই আবার তা থেকে সরে এল টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন- বিটিআরসি।
মঙ্গলবার বিকেলে পোর্টাল বন্ধের প্রক্রিয়ার শুরুতে সব পোর্টালই বন্ধ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। পরে নিবন্ধিতগুলো খুলে দেয়া হয়। তবে সন্ধ্যার খানিক পর অনিবন্ধিত সাইটগুলোও খুলে দেয় সংস্থাটি।
বুধবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কমিশনে সভা ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্ধ হওয়া সবগুলো সাইট আবার খুলে দেয়া হয়েছে। আমরা বন্ধ করা থেকে একেবারে সরে আসিনি, তবে বুঝে শুনে যাচ্ছি।
‘হাইকোর্ট থেকে যে অর্ডারটা আসছে, সেখানে বলা হয়েছে ৯২টা পোর্টালের নিবন্ধন দেয়া আছে, সেগুলো ছাড়া বাকি সবগুলোই অবৈধ। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, ৯২টার বাইরে সবগুলো অবৈধ নয়, বেশ কিছু বৈধ পোর্টালও রয়েছে। রিট পিটিশনের তালিকার বাইরেও নিবন্ধিত সাইট রয়েছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা পরে পদক্ষেপ নেব।’
গত ১৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সাত দিনের মধ্যে অনিবন্ধিত সব সাইট বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়। আদেশ পালন করে ২৮ অক্টোবর প্রতিবেদনও চায় আদালত।
তবে নির্ধারিত দিনে বিটিআরসির আবেদনে আগামী ২৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
প্রায় ছয় হাজার আবেদন পড়েছে নিবন্ধনের জন্য, সেগুলোর কী হবে- এমন প্রশ্নে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কোনো মতামত নেই। আমরা তো হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন করছি।’
একই বিষয়ে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ‘আমরা নিউজ সাইটগুলো বন্ধ করা থেকে আপাতত সরে এসেছি। হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিল ৯২টা পোর্টাল বাদে বাকিগুলো বন্ধ করে দেয়ার জন্য। যখন আমরা বন্ধ করতে গেলাম, তখন দেখলাম অনেক রেজিস্টার্ড এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানও তার মধ্যে আছে। ওই তালিকা হাইকোর্টের তালিকায় ছিল না। এজন্য আমরা বন্ধ করা থেকে সরে এসেছি।
‘আগামীকাল এ বিষয়ে কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কালকে কমিশনের বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে, সাইটগুলো এখনই বন্ধ হবে, নাকি আরও সময় নেব আমরা।’
অনিবন্ধিত নিউজপোর্টাল বন্ধের বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রায় সব নিবন্ধিত এবং দেশের শীর্ষ সংবাদপত্রগুলোর অনলাইন পোর্টালও এক ঘণ্টার বেশি সময় বন্ধ রাখে বিটিআরসি।
মঙ্গলবার বিকাল পৌনে পাঁচটা থেকে ছয়টার পর পর্যন্ত সাইটগুলোতে প্রবেশকরতে গেলে ব্রাউজারে নোটিস দেয়া হয়- ওয়েবসাইটটি ‘ব্লক’ করা হয়েছে। পরে সাইটগুলো এক এক করে খুলে দেয়া হয়।
২০১৯ সালেও একবার পর্নোসাইট বন্ধ করতে গিয়ে ব্লগসাইটসহ অনেক ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছিল বিটিআরসি। পরে সেগুলো খুলে দেয়া হয়।
নানা অভিযোগে বিটিআরসি এর আগেও নানা সময় এক শরও বেশি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করেছে।
গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ২০১৯ সালে ১০টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১৮ সালে বন্ধ করে দেয়া হয় ৫৮টি। পরে এগুলোর বেশ কিছু আবার চালু করা হয়।
এরও আগে ২০১৬ সালের আগস্টে একসঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হয় ৩৫টি পোর্টাল।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষে অনলাইনভিত্তিক নিউজপোর্টালগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়।
২০১৫ সাল থেকে অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে নীতিমালার আওতায় আনার উদ্যোগ শুরু করে। আর নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয় বর্তমান সরকারের আমলে।
নিবন্ধনের জন্য ছয় হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। আবেদনের বাইরেও রয়েছে বহু পোর্টাল।
যেসব পোর্টাল নিবন্ধনের আবেদন করেছে, সেগুলোর মধ্যে দুই দফায় ৮৫টি অনলাইন পোর্টালকে নিবন্ধনের সুযোগ দিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আরও নিবন্ধন দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।