পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সদ্য পদত্যাগী চেয়ারমান এসএম আমজাদ হোসেনের শত শত কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এই সম্পদের একাংশ দেশে, একাংশ বিদেশে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে এই সম্পদের হিসাব।
সংস্থাটি জানতে পেরেছে, সম্পদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক বাড়ি। বেলজিয়াম, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। এসব দেশেও রয়েছে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ।
এইসব বিপুল সম্পদের সন্ধান পেয়ে আমজাদ হোসেনকে আবার জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
আগের জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে ঋণ জালিয়াতি, বিদেশে অর্থ পাচার এবং সম্পদ গড়ার বেশ কিছু তথ্য পায় দুদক।
খুলনা অঞ্চলের এই ব্যবসায়ী স্থানীয়ভাবে আমজাদ নিকারি নামে পরিচিত ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে এলাকায় ঘুরে ঘুরে গৃহস্তের কাছ থেকে মাছ কিনে বাজারে বিক্রি করতেন বলে নামের সঙ্গে ‘নিকারি’ শব্দটি যুক্ত হয়।
আশির দশকে বাংলাদেশ থেকে ফ্রোজেন ফিস রপ্তানি শুরু হলে, শুরুতেই তিনি সেই ব্যবসায় যুক্ত হন। গঠন করেন নিজের গ্রামের নামে লকপুর গ্রুপ।
অভিযোগ আছে বিদেশে চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ রপ্তানির নামে তার প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় অপদ্রব্য রপ্তানি করে এই খাতকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন।
তিনি বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরায় একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। খুলনা শহরে তার রয়েছে একধিক বাড়ি, আবাসিক হোটেল ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে লকপুর ফিশ প্রসেস কোম্পানি লিমিটেড, বাগেরহাট সিফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, শম্পা আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড, রুপসা ফিশ অ্যান্ড অ্যালাইড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মুন স্টার ফিশ লিমিটেড, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, খুলনা অ্যাগ্রো এক্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড, ইস্টার্ন পলিমার লিমিটেড, মেট্রো অটো ব্রিকস লিমিটেড, খুলনা বিল্ডার্স।
অনুসন্ধান করে আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে কেবল সাউথ বাংলা ব্যাংকেরই ৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করার প্রমাণ মিলেছে। এখন অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থ পাচারের প্রমাণ জোগাড় করতে কাজ করছে দুদক।
জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ৯ জনকে গত রোববার জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক উপপরিচালক গুলশান আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন তদন্ত দল।
দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসএম আমজাদ হোসেনের ঋণ জালিয়াতির ঘটনার অনুসন্ধানে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এমডিসহ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।’
জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা হলেন ব্যাংকটির সাবেক এমডি রফিকুল ইসলাম, এমটিও তপু কুমার সাহা, সিনিয়র অফিসার বিদ্যুৎ কুমার মন্ডল, এফএভিপি ও অপারেশন ম্যানেজার মঞ্জুরুল আলম, ভিপি ও শাখা প্রধান এসএম ইকবাল মেহেদী, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার খালেদ মোশাররফ, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট জিয়াউল লতিফ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেডিডেন্ট মামুনুর রশীদ মোল্লা, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলী।
দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট টিমের এক সদস্য জানান, রোববার জিজ্ঞাসাবাদে সাবেক এমডি বলেছেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশেই তারা ঋণ মঞ্জুর করেছেন। যেহেতু ঋণটি চেয়ারম্যানের নির্দেশে হয়েছে তাই ঋণের ক্ষেত্রে তারা সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী করেননি। এটি তাদের ভুল ছিল।
অন্যরা বলেছেন, তারা এমডির নির্দেশে কাজ করেছেন। তাদের কিছুই করার ছিল না।
এস এম আমজাদ হোসেন নিজের ভাই ও স্ত্রীকেও ব্যাংকের পরিচালক বানিয়েছেন।