বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশে জলাতঙ্কে মৃত্যু কমেছে ৭০ শতাংশ

  •    
  • ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৮:২৭

জলাতঙ্ক রোগে মৃত্যু অনিবার্য হলেও এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। এই রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো সমাধান কুকুরে নিয়মিত জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকাদান। সেই টিকা কার্যক্রমে গতি বাড়িয়েছে সরকার।

যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা রিজিয়া বেগম এক মাস আগে বাড়ির পোষা বিড়ালের আঁচড় খেয়েছিলেন। জলাতঙ্কে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে দেশের সবচেয়ে বড় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে যান তিনি। চিকিৎসকের পরার্মশে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে টিকাও নেন।

রিজিয়া বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খাবার দিতে গিয়ে পোষা বিড়াল আঁচড়ে দেয়। হাসপাতালের চিকিৎসক এক ডোজ টিকা দিয়েছেন। আরও তিন ডোজ টিকা দিতে হবে।’

জলাতঙ্ক রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। কুকুর ও বিড়ালে কামড় দিলে আগে গ্রামের মানুষ চিকিৎসকের কাছে আসত না। যেত ঝাড়ফুঁক করা কবিরাজের কাছে। এখন সেই চিত্রের পরিবর্তন এসেছে। সেই সঙ্গে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে সরকারের টিকা কার্যক্রমের গতি বেড়েছে। ১০ বছরে জলাতঙ্কে মৃত্যুর হার কমেছে ৭০ শতাংশ।

জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচির তথ্য বলছে, ২০১১ সালে সারা দেশে কুকুরের আঁচড় বা কামড়ের শিকার হন ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৪৪ জন মানুষ। এর মধ্যে জলাতঙ্কে মারা যান ৮২ জন। একই সময়ে ৪৫ হাজার ৬৫৫টি কুকুরকে টিকা দেয়া হয়।

এরপর থেকে কুকুরের জলাতঙ্ক টিকাদান বাড়ানোর ওপর জোর দেয়ায় কমতে থাকে মৃত্যু। গত বছর ২০২০ সালে ২৬ জন মারা যায় জলাতঙ্কে। সে হিসেবে ১০ বছরে জলাতঙ্কে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশ কেমেছে।

এ বছরের শুরু থেকে জুন পর্যন্ত জলাতঙ্কে প্রাণ গেছে ১১ জনের।

এই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলাতঙ্ক রোগে মৃত্যু অনিবার্য হলেও এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। এই রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো সমাধান কুকুরে নিয়মিত জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকাদান। সেই টিকা কার্যক্রমে গতি বাড়িয়েছে সরকার।

গবেষণা বলছে, জলাতঙ্ক আক্রান্তদের ৭০ ভাগই পুরুষ। আবার আক্রান্তদের ৪৭ ভাগ শিশু, যাদের বয়স ১৫ বছরের কম। আক্রান্তদের ৮২ ভাগই গ্রামে থাকেন এবং ৯০ ভাগ কুকুরের কামড়ে সংক্রমিত। বিড়াল, শেয়াল ও বেজি দ্বারা সংক্রমিত জলাতঙ্কের হার যথাক্রমে ৬ শতাংশ, ৩ শতাংশ ও ও ১ শতাংশ। প্রাণীর কামড়ে আক্রান্তের হার ৯৫ শতাংশ এবং আঁচড়ে ৫ শতাংশ।

দেখা গেছে, আক্রান্তদের ৭৮ ভাগই আধুনিক চিকিৎসা নেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ৯৬ শতাংশ জলাতঙ্ক সংক্রমণের জন্য কুকুর দায়ী। কুকুর নিধন নয়, তাদের গণহারে টিকা প্রদান, অভিভাবকত্ব প্রসারণ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণের প্রধান সমাধান।

মহাখালীতে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুকুর-বিড়ালের আঁচড় ও কামড় খেয়ে অনেক রোগী ভিড় করছেন এই হাসপাতালে। আগের তুলনায় চাপ কমলেও রোগী সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে দৈনিক ৫০০ এর বেশি রোগী আসছেন সেবা নিতে। জরুরি বিভাগের পাশেই জলাতঙ্কের টিকা নিতে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইন। অনেকে প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়ে, আবার অনেকে বিভিন্ন ল্যাবে কাজ করায় সচেতনভাবে টিকা নিতে এসেছেন।

হাসপাতালের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১১ সাল থেকে এ বছরের মে পর্যন্ত এই হাসপাতালে ৬ লাখ ২১ হাজার ৬৪৭ জন জলাতঙ্কের চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে চলতি বছরের মে পর্যন্ত সেবা নিয়েছেন ২৬ হাজারের বেশি। অন্যদিকে, গত দশ বছরে এই হাসপাতালে জলাতঙ্কে মৃত্যু কমেছে ৮১ শতাংশ। ২০০৯ সালে সর্বোচ্চ ১০৯ জনের মৃত্যু হয়। গত বছর মারা যায় ২০ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১০ সালের আগে প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে হয়ে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতেন। দশ বছর পর সেই সংখ্যা ৭০ শতাংশ কমে এসেছে। এ বছর জলাতঙ্কে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩০, গত বছরে ছিল ২৬ এবং তার আগের বছর ২০১৯ সালে ছিল ৫৭ জন।

অসচেতনতা, দারিদ্র্য, রাস্তায় উদ্বাস্তু কুকুরের সংখ্যাধিক্য এবং পোষা কুকুরের টিকা নিশ্চিতকরণে অবহেলার কারণে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে এখনও বেশি। অর্থনৈতিক ক্ষতি, উচ্চমাত্রার স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং মৃত্যুহার বিবেচনায় জলাতঙ্কে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। বছরে ৪ লাখের বেশি মানুষ কুকুর, বিড়াল, শেয়াল ও বানরের কামড় বা আঁচড়ের শিকার হয়, যাদের বেশির ভাগই ১৫ বছর বয়সের নিচের শিশু।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, ২০১০ সালের আগে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় আড়াই হাজার মানুষ জলাতঙ্কে প্রাণ হারাত। গবাদি প্রাণীর মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান এখনও অজানা। আনুমানিক সংখ্যা ২৫ হাজার, যার অর্থনৈতিক মূল্য অপরিসীম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল অপারেশন প্ল্যানের অধীনে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জলাতঙ্কমুক্ত করার লক্ষ্যে ২০২০ সাল থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কর্মসূচি বাস্তবায়ন চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ কার্যক্রমের আওতায় সারা দেশে এক রাউন্ড ব্যাপক হারে কুকুর টিকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দেশের ছয়টি জেলার সকল উপজেলায় তিন রাউন্ড এবং ১৬টি জেলায় দুই রাউন্ড টিকার কাজ সফলভাবে শেষ হয়েছে। এভাবে টিকাপ্রাপ্ত মোট কুকুরের সংখ্যা ২১ লখ ৩৮ হাজারেরও বেশি। এ ছাড়া জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র রয়েছে ৬৭টি। এসব কেন্দ্রে প্রতিবছর বিনা মূল্যে ৪ লাখের বেশি রোগীকে টিকা দেয়া হচ্ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, ব্যাপক হারে টিকাদান নিশ্চিত করলে মানুষ ও কুকুর উভয়ই নিরাপদ থাকবে। তবে প্রাথমিক লক্ষণ দেখে কুকুরে জলাতঙ্ক সংক্রমিত হয়েছে কি না বোঝা অনেক কঠিন। এ জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই।

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, জলাতঙ্ক রোগে মৃত্যু অনিবার্য হলেও এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। এই রোগ প্রতিরোধের সর্বোৎকৃষ্ট সমাধান কুকুরে নিয়মিত জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকাদান। জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে ৭০ ভাগকে কুকুরকে টিকার আওতায় আনা গেল সব কুকুরের শরীরে সম্মিলিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ফলে জলাতঙ্ক ভাইরাস কুকুর থেকে কুকুরে কিংবা মানুষে সংক্রমিত হতে পারে না।

এ বিভাগের আরো খবর