রাজধানীতে নিজের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া পাঠাও চালক শওকত আলম সোহেলকে একটি নতুন মোটরসাইকেল দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রামের এক প্রকৌশলী।
সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন নামের ওই প্রকৌশলী।
নাসির উদ্দীন শামসুল হক ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের চেয়ারম্যান।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে অভাবগ্রস্তদের বিনা সুদে ঋণ দেয়া হয়। আমরা এরই মধ্যে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বেশ কিছু দরিদ্র মানুষকে রিকশা, ভ্যান ও মোটরসাইকেল দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সোমবার সকালে রাগে-দুঃখে ওই ব্যক্তির মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে। কোনো অভাবগ্রস্তকে ঋণ হিসেবে দেয়ার জন্য আমাদের একটি মোটরসাইকেল কেনা আছে। তাই বাইকটি ওনাকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওনার হয়ে ঋণটা আমি পরিশোধ করব। উনি মোটরসাইকেলটি বিনা মূল্যে পাবেন।’
বাইকে আগুন
রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় ট্রাফিক সার্জেন্ট মামলা দেয়ার প্রস্তুতিকালে ক্ষোভে নিজের মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছেন শওকত আলম সোহেল নামের এক বাইকার।
সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে এ ঘটনা ঘটে।
ব্যবসায় লোকসান হওয়ার পর তিনি উবারে যাত্রী টেনে সংসার চালাতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মিরাদুল মুনিম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর সেটি ভিডিও করে ফেসবুকে শেয়ার করেন। মুহূর্তে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।
তিনি লেখেন, ‘মনের কষ্টে নিজের বাইকে আগুন! কাগজপত্রে সামান্য ত্রুটি থাকায় মামলা দেয় পুলিশ। তাই মনের কষ্টে গ্যাসলাইট দিয়ে নিজেই আগুন ধরিয়ে দেয় শওকত আলম সোহেল নামের এই হতভাগা আদম। আগুন নেভাতে অনেক চেষ্টা করলাম, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ!’
ভিডিওতে দেখা যায়, বাইকে আগুন দিয়ে সোহেল উদভ্রান্তের মতো চিৎকার করছেন। প্রত্যক্ষদর্শী একজন পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। তখন সোহেল এসে তাকেই বাধা দেন। বলেন, ‘কেউ যাবেন না, আপনারা কেউ যাবেন না।’
অন্য একজন সোহেলকে বলেন, ‘ভাই মাথা ঠাণ্ডা করেন।’
পুলিশ জানিয়েছে, সার্জেন্ট এই ঘটনার পরে আর মামলা দেননি। আগুন নিভিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাইকচালক ও দায়িত্বে থাকা সার্জেন্টকে থানায় নেয়া হয়। দুই পক্ষের বক্তব্য শোনেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ।
এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে জানা গেছে বাইকার শওকতের বাড়ি কেরানীগঞ্জে। করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে তিনি স্যানিটারি সামগ্রীর ব্যবসা করতেন। এতে তার লোকসান হয়।
জীবিকা নির্বাহে শওকত দুই মাস ধরে বাইকে যাত্রী পরিবহন করতেন। তিনি অ্যাপভিত্তিক রাইড সেবা উবার ব্যবহার করতেন।
কয়েক দিন আগে পল্টনে ট্রাফিক আইন অমান্য করায় একটি মামলা হয় শওকতের নামে। এ মামলার টাকা পরিশোধ করার পর সকালে আবার মামলা দিতে যাচ্ছিলেন বাড্ডা এলাকার দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট। তখন ক্ষুব্ধ হয়ে বাইকের ট্যাংকি থেকে তেল বের করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন শওকত।