বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আ.লীগ নেতার ‘সরকারি জমি দখল’, তদন্ত শুরু

  •    
  • ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২০:৪৮

তদন্তকালে এমপি বাজার গড়ে তোলার সপক্ষে কমিটির কাছে কোনো বৈধ দলিলপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি খন্দকার আজিজুল হক ও দোকানমালিকরা। যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে বাজারের জায়গা ভরাট করার অভিযোগও স্বীকার করেন সাবেক সাংসদ আরজু।

পাবনার বেড়ার নগরবাড়ীতে সরকারি জমি দখল করে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সাংসদ খন্দকার আজিজুল হক আরজুর বিরুদ্ধে প্লট বিক্রি করে বাজার গড়ে তোলার অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে নেমেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তদন্ত দল।

সোমবার দুপুরে রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে তদন্ত দল এমপি বাজার নামে প্রতিষ্ঠিত বাজারটি পরিদর্শনে যায়।

তারা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর ও স্থানীয়দের বক্তব্য নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগে জানা যায়, নগরবাড়ীতে যমুনা নদীর পাড়ে সড়ক ও জনপথ এবং খাস খতিয়ানের প্রায় ৮ একর জমি দখল করে এমপি বাজার নামে অবৈধ বাজার গড়ে ২৬৪টি প্লট বিক্রি করেন পাবনার সাবেক সাংসদ খন্দকার আজিজুল হক আরজু।

তদন্ত কমিটির সদস্য পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আফরোজা আক্তার, সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ আকন্দ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনা উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহিন রেজা ও জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য এস এম মাহবুবুল আলম বাজার পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন।

তদন্তকালে এমপি বাজার গড়ে তোলার সপক্ষে কমিটির কাছে কোনো বৈধ দলিলপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি খন্দকার আজিজুল হক ও দোকানমালিকরা। যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে বাজারের জায়গা ভরাট করার অভিযোগও স্বীকার করেন সাবেক সাংসদ আরজু।

মানবিক বিবেচনায় বাজার উচ্ছেদ না করতে তদন্ত কমিটির কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।

তদন্ত দলের আসার খবরে বাজারের বিভিন্ন দোকানের সাইনবোর্ড থেকে এমপি বাজার লেখা মুছে দেন সাবেক সাংসদের লোকজন। দুপুরে তদন্ত দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের জমির নথি ও মানচিত্র পর্যলোচনা করে। পরে এমপি বাজার ঘুরে দেখে অবৈধ দখলের বিষয়ে নিশ্চিত হয়।

সওজের পাবনা উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ আকন্দ জানান, ১৯৫৩ সালে নগরবাড়ী ঘাটে জমি অধিগ্রহণ করে সওজ। একসময় তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। চর জেগে ওঠার পর জায়গাটি অবৈধ দখলে চলে যায়। কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও এখান থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা যায়নি।

তিনি জানান, বর্তমানে নগরবাড়ীতে আন্তর্জাতিক নৌবন্দরের নির্মাণকাজ চলছে। সরকারের প্রয়োজনেই অবৈধ দখলে থাকা জমি পুনরুদ্ধার প্রয়োজন।

তদন্ত কমিটির প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আজিজুল হক আরজু বলেন, ‘আমি ব্যক্তিস্বার্থে কোনো দুর্নীতি করিনি। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বাজারটি গড়তে সহায়তা করেছি। বাজারটি অবৈধ হলেও জনস্বার্থে তা উচ্ছেদ না করে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।’

তদন্তাধীন বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তদন্ত কমিটির প্রধান রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আব্দুল মান্নান। শিগগিরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা সব নথি ও ম্যাপের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। সংশ্লিষ্ট সবার বক্তব্য শুনেছি। প্রতিবেদনে তা বিস্তারিত উল্লেখ করা হবে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, যমুনাপাড়ের সওজ ও খাস খতিয়ানের প্রায় ৮ একর জমি দখল করেন সাবেক সাংসদ খন্দকার আজিজুল হক আরজু। সেখানে এমপি বাজার নামে অবৈধ বাজার গড়ে ২৬৪টি প্লট বিক্রি করেন তিনি।

এ নিয়ে নিউজবাংলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

স্থানীয়ভাবে এমপি বাজার নামে পরিচিত এ মার্কেট ২০১৮-১৯ সালে নির্মাণ করা হলেও সম্প্রতি নতুন করে মাটি ভরাট করে বাড়ানো হয়েছে মার্কেটের পরিধি। বরাদ্দ দেয়া হয়েছে নতুন প্লট।

স্থানীয়রা জানান, বেড়ার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের নগরবাড়ী একসময় উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ছিল। যমুনা নদী গতিপথ পরিবর্তনের কারণে নগরবাড়ী ফেরিঘাট নদীর পাশ্ববর্তী কাজীরহাটে সরিয়ে নিলে স্থানটির গুরুত্ব কমে যায়।

ওই ফেরিঘাটের পাশেই ছিল নলখোলা মথুরাপুর হাট। তবে প্রায় ৩০ বছর আগে তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। কয়েক বছর আগে ওই স্থানে ফের চর জাগে।

তারা আরও জানান, ২০১৮ সালে পাবনা-২-এর তৎকালীন সংসদ সদস্য আজিজুল হক স্থানটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেন। উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদকে না জানিয়ে অনুমোদন ছাড়াই যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে স্থানটি ভরাট করা হয়। পরে নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে ২৬৪টি প্লট করে বিক্রি করেন তিনি। প্লট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা পরে ওই জমিতে আরসিসি পিলার করে মার্কেট নির্মাণ করেন।

দোকানমালিকরা জানান, ৩২ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ২০ ফুট প্রস্থের প্রতিটি প্লট পেতে তাদের কাছ থেকে সাবেক এমপির প্রতিনিধিরা নিয়েছেন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। টাকা নেয়ার রসিদ দিলেও, জমির জন্য দেয়া হয়নি কোনো কাগজ বা চুক্তিপত্র।

সম্প্রতি এমপি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন করে ফের নদী থেকে বালু তুলে ভরাটের কাজ চলছে। এসব জমিতে নতুন প্লট বরাদ্দ দেয়ার কাজও প্রায় শেষ। প্লট বরাদ্দের দায়িত্বে রয়েছেন সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া একসময়ের প্রভাবশালী জামায়াত নেতা ইমান আলী মোল্লা।

মার্কেট নির্মাণের বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে অনুমোদন না থাকার কথা স্বীকার করেছেন সাবেক সাংসদ খন্দকার আজিজুল হক আরজু। তবে নদী দখল করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়নি বলে দাবি তার।

তিনি বলেন, ‘শতাব্দী প্রাচীন মথুরাপুর হাটের জমি নতুন করে জেগে উঠলে খাস জমিতে বর্তমান বাজার স্থাপন করা হয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে দল মনোনয়ন না দেয়ায় সংসদ সদস্য হতে পারিনি। এ কারণে জমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়নি।

‘লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ পাওয়া প্লটমালিকদের কাছ থেকে জমির উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য পরিচালনা কমিটি ৯৭ হাজার ১০০ টাকা করে নিয়েছে। এখানে ব্যক্তিগত লাভের কোনো বিষয় নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর