ইসলামি সুকুক বন্ড ছেড়ে বাজার থেকে তিন হাজার কোটি টাকা তুলতে বেক্সিমকো লিমিটেডের উদ্যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা এই বন্ড নিয়ে অনীহা দেখানোর পর এই বন্ডে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সহজ করে দেয়া হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকের বিশেষ তহবিলের ৭০ শতাংশ বেক্সিমকোর সুকুক বন্ডে বিনিয়োগ করা যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বেক্সিমকোর কথা উল্লেখ না থাকলেও এর সুবিধা এই কোম্পানিটি পাবে।
এতে জানানো হয়েছে, সৌর, বায়ু, জল, বায়োমাসের মতো নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগের উদ্দেশে বেসরকারি উদ্যোক্তার আনা গ্রিন সুকুক বন্ডে বিনিয়োগ করা যাবে।
সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বেক্সিমকোকে বন্ড ছেড়ে তিন হাজার কোটি টাকা তোলার অনুমতি দিয়েছে। এই টাকায় দুটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে কোম্পানিটি।
এই বন্ড বিনিয়োগকারীদেরকে আকর্ষণীয় মুনাফা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বছরে ৯ শতাংশ ন্যূনতম মুনাফা দেয়ার পাশাপাশি আরও নানা শর্ত আছে, যে কারণে বছরে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ মুনাফা পাবেন বিনিয়োগকারীরা।
সেই শর্তের মধ্যে আছে বেক্সিমকো লিমিটেডের লভ্যাংশ ১০ শতাংশের বেশি হলে যতটুকু বেশি হবে, তার ১০ শতাংশ যোগ হবে সুকুকের লভ্যাংশে।
আবার প্রতিবছর বিনিয়োগকারীরা ২০ শতাংশ টাকা তুলে নিতে পারবেন অথবা তিনি চাইলে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার নিতে পারবেন।
এখানেই বাড়তি মুনাফার সুযোগ। কারণ, এই শেয়ার পাওয়া যাবে ২৫ শতাংশ কম দামে। রেকর্ড ডেটের আগের দুই সপ্তাহের ভরিত গড় হিসাব করে এই শেয়ার দেয়া হবে।
অর্থাৎ শেয়ার মূল্য ১০০ টাকা হলে বিনিয়োগকারী পাবেন ৭৫ টাকায়, শেয়ার মূল্য ২০০ হলে পাবেন ১৫০ টাকায়, আর শেয়ার মূল্য ৩০০ হলে পাবেন ২২৫ টাকায়, শেয়ার মূল্য ৪০০ টাকা হলে তিনি পাবেন ৩০০ টাকায়। এভাবে যে শেয়ার তিনি পাবেন, তাতে ৩৩ শতাংশ মুনাফা করার সুযোগ আছে। সব মিলিয়ে এক লাখ টাকায় ৫ বছরে ৭৮ হাজার টাকা মুনাফা পাবেন তিনি।
আকর্ষণীয় মুনাফার পরেও পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ নেই সেভাবে। তাদের কাছ থেকে ৭৫০ কোটি টাকা তোলার পরিকল্পনা করেছিল বেক্সিমকো। কিন্তু ৫৫ কোটি টাকার মতো বন্ডের জন্য আবেদন জমা পড়েছে। দুই দফা সময় বাড়ানোর পর বিএসইসি বেক্সিমকোকে জানিয়েছে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি ৭৫০ কোটি টাকার এই বন্ড বিক্রি না হয়, তাহলে আইপিও বাতিল হয়ে যাবে।
এর তিন দিন আগে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়
২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে মন্দাভাবের সময় তারল্য প্রবাহ বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকা করে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই তহবিলে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক বিনিয়োগসীমার বাইরে।
এই তহবিল গঠন করার পর ৬২টি ব্যাংকের ১২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন হতে পারত। কিন্তু হয়েছে চার হাজার কোটি টাকারও কম। আর গত আগস্টের হিসাব অনুযায়ী এই তহবিলেরও অর্ধেকের মতো টাকা বিনিয়োগ হয়েছে পুঁজিবাজারে। ফলে আরও বিনিয়োগের সুযোগ আছে।
বিনিয়োগযোগ্য সুকুক ও তহবিল ব্যবহারের নিয়ম
বেসরকারি উদ্যোক্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত সুকুক-এ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত প্রযোজ্য হবে। বিনিয়োগকৃত সুকুক-এর প্রকৃতি হবে ইস্তিনা সুকুক, সালাম সুকুক, ইজারা সুকুক ও উপর্যুক্ত একাধিক প্রকৃতির সুকুকের সমন্বয়ে গঠিত কোনো হাইব্রিড সুকুক।
সুকুকের তহবিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম পরিপালন করা হবে। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শতভাগ মার্জিনে ঋণপত্র খুলতে হবে। পণ্য ১২০ দিনের মধ্যে জাহাজীকরণ বা সরবরাহ করার শর্ত থাকতে হবে। সমস্ত স্থানীয় ব্যয়, যদি থাকে, ৬ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্প উন্নয়নে সর্বোচ্চ ৮ মাস সময় বরাদ্দ থাকতে পারে।
এসব সময়সীমা সুকুক সাবস্ক্রিপশন ক্লোজিংয়ের (আবেদনের শেষ সময়) তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
অন্য যেসব শর্ত
সুকুক-এর তহবিল স্পেশাল পারপজ ভেহিকেলের (এসভিপি) নামে খোলা ব্যাংক হিসাবে সংরক্ষণ করতে হবে। ওই ব্যাংক হিসাব হতে সুকুক-এর জন্য নির্ধারিত সুনির্দিষ্ট ব্যয় ব্যতীত অন্য কোনো খাতে খরচ বা কর্জ প্রদান করা যাবে না।
প্রাইভেট প্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে কোনো কারণে বাংলাদেশ সিকিউটিরিটি অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুকুক-এর সাবস্ক্রিপশন সম্পূর্ণ না হলে বা সুকুক ইস্যুর বিষয়টি বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট এসভিপি কর্তৃক এক সপ্তাহের মধ্যে বিনিয়োগকারী ব্যাংকগুলোকে পুরো অর্থ ফেরত দিতে হবে।
এ বিষয়ে সুকুক-এর ট্রাস্টি, এসভিপি এবং বিনিয়োগকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করতে হবে।
সেকেন্ডারি মার্কেট বা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বা উভয় প্রকারে কোনো সুকুক-এর মোট ইস্যুর ১০ শতাংশের বেশি পরিমাণ কোনো ব্যাংক বিনিয়োগ করতে পারবে না।
কনভার্টেবল সুকুক-এর ক্ষেত্রে কনভার্সন-এর পর ইক্যুয়িটি ধারণ যেন ১০ শতাংশের বেশি না হয়, তা বিনিয়োগকারী ব্যাংককেই নিশ্চিত করতে হবে।
অতালিকাভুক্ত সুকুক-এ বিনিয়োগের পূর্বে সাবস্ক্রিপশন ক্লোজিংয়ের তারিখ হতে এক বছরের মধ্যে তালিকাভুক্তির বিষয়ে ট্রাস্টি, এসভিপি, ইস্যুয়ার এবং বিনিয়োগকারী ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হবে।