বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুই প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় সেই বাইকে আগুন

  •    
  • ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২০:০৫

‘আমি এইখান দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি বাইকের আগুন জাকির ভাই নিভাচ্ছেন। এখানে এসে শুনলাম সামনের কাটা রাস্তা দিয়ে বাইক ঘুরাচ্ছিলেন ওই বাইকার। ঘোরার সময় সার্জেন্ট গাড়ি চাপাইছে। চাপানোর পর মামলা দিতে চাইছেন। বাইকের ড্রাইভার অনেক অনুরোধ করছেন। কিন্তু সার্জেন্ট মামলা দিতে গেলে উনি নিজের বাইকে নিজে আগুন দেন। আগুন দেয়ার সাথে সাথে সার্জেন্ট দূরে সরে গেছেন।’

পুলিশ মামলা করতে উদ্যত হওয়ায় অ্যাপে চালানো একটি মোটরসাইকেলে বাইকারের আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনায় তোলপাড়।

সেখানে কী হয়েছিল, বলছে না পুলিশ, বাইকারের খোঁজও মিলছে না।

তবে ঘটনাস্থল গুলশান-বাড্ডায় গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজনকে পাওয়া গেল, যাদের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া গেছে।

স্থানীয়রা জানান, গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড দিয়ে গুলশানের পথে যাত্রা করে সেই বাইকার সড়ক বিভাজকের একটি ফাঁক দিয়ে উল্টো দিকের সড়কে চলে আসতে চান। সেই ফাঁক দিয়ে মূলত হেঁটে চলে মানুষ।

এ সময় সেখানে দায়িত্ব পালন করা একজন সার্জেন্ট সেই বাইকারকে আটকে দিয়ে কাগজপত্র চান। তখন তিনি মামলা না দিতে আকুতি-মিনতি করেন। বলেন, বাইকে যাত্রী টেনে সংসার চালান। কিছুদিন আগেও একটি মামলা হয়েছে। টাকার অভাবে ভাঙাতে পারেননি। এখন আবার মামলা দিলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাবে।

কিন্তু সেই সার্জেন্ট তার অনুরোধে গা করেননি। তিনি মামলা করতে কোমরে থাকা পজ মেশিন বের করেন। সে সময় সেই বাইকার হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বাইক থেকে তেল বের করে আগুন ধরিয়ে দেন।

এরপর আর মামলা করেননি সার্জেন্ট। তবে তাকে আর পাওয়া যায়নি।

বাইকের আগুন নেভানোর চেষ্টা করা ভাই ভাই জেনারেল স্টোরের মালিক জাকির হোসেন বলছিলেন ঘটনার বর্ণনা। ছবি: নিউজবাংলা

সেই বাইকারের নাম শওকত আলম সোহেল। তিনি কেরানীগঞ্জে থাকেন। স্যানিটারি পণ্যের ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। করোনার সময় ব্যবসায় লোকসান দেয়ার পর বাইকে যাত্রী টেনে সংসার চালাতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

যে এলাকাটিতে শওকত তার বাইকে আগুন দিয়েছেন, তার পাশেই মুদি দোকান ‘ভাই ভাই জেনারেল স্টোর’। এর মালিক মালিক জাকির হোসেন তখন দোকানে বসা। ছুটে এসে পানি ঢেলে আগুন নেভান।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি দোকান থেইকা বাইর হইয়া দেহি, বাইকে আগুন জ্বলতেছে। সবাই দেখি ভিডিও করে, কেউ আগুন নিভায় না। পরে আমি ড্রাম থেইকা পানি দিছি। দেহি নিভে না। ওই লোক (শওকত) আমার গায়ে পর্যন্ত হাত উঠাইছে। পরে আমি জনতা ইনস্যুরেন্স থেইকা পাইপ টাইনা আইনা আগুন নিভাইছি।’

মিরাদুল মুনিম নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর সেটি ভিডিও করে ফেসবুকে শেয়ার করেন। মুহূর্তে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

ভিডিওতে দেখা যায়, বাইকে আগুন দিয়ে শওকত উদভ্রান্তের মতো চিৎকার করছেন। প্রত্যক্ষদর্শী একজন পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। তখন তিনি এসে তাকেই বাধা দেন। বলেন, ‘কেউ যাবেন না, আপনারা কেউ যাবেন না।’

অন্য একজন শওকতকে বলেন, ‘ভাই মাথা ঠান্ডা করেন।’

জাকির হোসেন বলেন, ‘আগুন নিভাইতে গেলে ওই লোক আমারে দুইবার বাধা দিছে। একবার গালি দিছে, গায়ে ধরছে। পরে আমার লগে শক্তিতে পারে নাই। চাপাইয়া দিছি। আগুল লাগলে আমার দোকান পুড়ত। জনতা ইনস্যুরেন্স পুড়ত। পেছনে আছে কাপড়ের দোকান।’

কেন নিজের বাইকে আগুন দিলেন সেই ব্যক্তি?

এই স্থানেই বাইকটিতে আগুন দেয় রাইডার শওকত। ছবি: নিউজবাংলা

জাকির বলেন, ‘সার্জেন্ট মামলা দেয়ার আগেই বাইকে আগুন দিছে। সার্জেন্ট মামলা দিতেই পারে। তার মানে আগুন লাগাইয়া দিবে? আপনি সার্জেন্টের সাথে কথা কন। এইখানে সকাল থেইকা সন্ধ্যা পর্যন্ত এক হাজার হোন্ডা থাহে।’

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জহির মিয়া বলেন, ‘আমি এইখান দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি বাইকের আগুন জাকির ভাই নিভাচ্ছেন। এখানে এসে শুনলাম সামনের কাটা রাস্তা দিয়ে বাইক ঘুরাচ্ছিলেন ওই বাইকার। ঘোরার সময় সার্জেন্ট গাড়ি চাপাইছে। চাপানোর পর মামলা দিতে চাইছেন।

‘বাইকের ড্রাইভার অনেক অনুরোধ করছেন। কিন্তু সার্জেন্ট মামলা দিতে গেলে উনি নিজের বাইকে নিজে আগুন দেন। আগুন দেয়ার সাথে সাথে সার্জেন্ট দূরে সরে গেছেন।’

এক প্রত্যক্ষদর্শী বাইক পোড়ানোর বর্ণনা দিচ্ছেন জহির মিয়া। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি আরও বলেন, “জাকির ভাই আগুন নিভাতে গেলে জাকির ভাইকে ওই বাইকার বলছিলেন, ‘এই মিয়া আমার বাইক নেয়ানো লাগবে না আপনার’। বকাঝকা করছেন। বাইক তো অকটেন, পেট্রলে চলে। হঠাৎ করে আগুন লেগে ব্লাস্ট হলে পাশের দোকান ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে আগুন লাগলে তো ক্ষতি হয়ে যেত।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার সুবীর রঞ্জন দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জনতা ইন্সুরেন্স কোম্পানির বিল্ডিংয়ের সামনে মোটরসাইকেল, বাস দাঁড়িয়ে থাকে। এতে যানজট হয়। আজকে একটা মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে ছিল, সার্জেন্ট গিয়ে কাগজ চাইলে, ওই ভদ্রলোক কাগজ দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ধরিয়ে দেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন দিয়ে দেন।’

তিনি বলেন, ‘উনি ভেবেছিলেন মামলা হবে। মামলা হওয়ার আগেই আগুন দেন। উনি হতাশায় ছিলেন। যা থেকে উনি এমনটা করেছেন। আমি উনার সঙ্গে কথা বলেছি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা আমাদের ঊর্ধ্বতন স্যাররা নেবেন।’

এ বিভাগের আরো খবর