আলোচনা সভা, কবিতাপাঠসহ নানা আয়োজনে কুড়িগ্রামে পালিত হয়েছে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী।
২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান।
দিবসের আলোচনায় সৈয়দ শামসুল হকের নামে স্মৃতি কমপ্লেক্সের কাজ আটকে থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন জেলা প্রশাসক।
সৈয়দ শামসুল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে। তিনি ছিলেন সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও হালিমা খাতুন দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে প্রথম। স্কুলজীবন শেষ করেন কুড়িগ্রামে। এরপর মুম্বাইতে কিছুদিন চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থায় কাজ করেন। পরে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে পড়ালেখা শেষ না করেই পুরোদমে লেখালেখি শুরু করেন। ‘দেয়ালের দেশ’ তার প্রথম উপন্যাস।
কর্মজীবনের প্রায় সাত বছর কাটিয়েছেন লন্ডনে বিবিসি বাংলা বিভাগের সঙ্গে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে বিবিসি থেকে সংবাদ পরিবেশন করেছেন।
কবির এক ছেলে ও এক মেয়ে। তার স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হক।
দিবসটি উপলক্ষে সোমবার সকালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে কবির সমাধি চত্বরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দোয়া মাহফিল শেষে বিকেলে সমাধি চত্বরে লেখকের জীবনী নিয়ে আলোচনা সভা ও কবিতাপাঠের আসর বসে।
কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সৈয়দ শামসুল হকের নামে স্মৃতি কমপ্লেক্সের কাজ আটকে আছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দি হয়ে আছে কমপ্লেক্সের স্বপ্ন। আশা করছি খুব দ্রুত এ কমপ্লেক্সের কাজ শেষ হবে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, প্রেস ক্লাবের সভাপতি আহসান হাবীব নীলু, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান বাবু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক শ্যামল ভৌমিক।
সৈয়দ শামসুল হকের লেখকজীবন প্রায় বাষট্টি বছরের। লেখালেখির জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি অসাধারণ সৃষ্টিশীলতার সাক্ষর রাখেন। প্রাপ্তিও অনেক। তিনি স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান মাত্র ২৯ বছর বয়সে।
বাংলা সাহিত্য ভান্ডারে তার সংযোগও অনেক। তার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- একদা এক রাজ্যে (১৯৬১), বিরতিহীন উৎসব (১৯৬৯), বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালা (১৯৭০), প্রতিধ্বনিগণ (১৯৭৩), অপর পুরুষ (১৯৭৮), পরানের গহীন ভিতর (১৯৮০), নিজস্ব বিষয় (১৯৮২), রজ্জুপথে চলেছি (১৯৮৮), বেজান শহরের জন্য কোরাস (১৯৮৯), এক আশ্চর্য সংগমের স্মৃতি (১৯৮৯), অগ্নি ও জলের কবিতা (১৯৮৯), কাননে কাননে তোমারই সন্ধানে (১৯৯০), আমি জন্মগ্রহণ করিনি (১৯৯০), তোরাপের ভাই (১৯৯০), শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯০), রাজনৈতিক কবিতা (১৯৯১), নাভিমূলে ভস্মাধার, কবিতা সংগ্রহ, প্রেমের কবিতা, ধ্বংস্তূপে কবি ও নগর (২০০৯)।