মাত্রাতিরিক্ত কমিশন ও পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ এবং নানা দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে অ্যাপভিত্তিক মোটরগাড়ি চালকদের সংগঠন ড্রাইভারস ইউনিয়ন অফ বাংলাদেশ, ডিআরডিইউ।
মঙ্গলবার দিনব্যাপী রাইড শেয়ারিং অ্যাপ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
সোমবার অ্যাপে যাত্রী বহন করা এক বাইকার তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে এই কর্মসূচির ডাক এলো।
সকালে রাজধানীর গুলশান বাড্ডা লিংক রোডে সেই বাইকটিতে আগুন দেয়া হয়। সেই বাইকারের বিরুদ্ধে সম্প্রতি একটি মামলা হয় আর ট্রাফিক সার্জেন্ট নতুন করে আরও একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই সেই বাইকার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
ডিআরডিইউর সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চালকদের ছয়টি দাবি আগে থেকেই ছিল। কিন্তু পুলিশের হয়রানির কারণে একজন বাইক রাইডারের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে ফেলার কারণে সব চালক এর প্রতিবাদ জানাতে একমত হয়েছেন।
‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের অন্য দাবিগুলো আদায়ের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে এসেছি, কিন্তু কেউ আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের দিকে নজর দিচ্ছে না।’
বছর চারেক ধরে রাজধানীতে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা জনপ্রিয় হয়েছে।
২০১৫ সালে স্যাম নামে একটি অ্যাপভিত্তিক বাইক সেবা চালু হলেও বিষয়টি জনপ্রিয় হয় ২০১৭ সালে। ওই বছর আন্তর্জাতিক সেবা উবার চালু হয় দেশে। শুরুতে তারা প্রাইভেট কার ভাড়ার সেবা নিয়ে এলেও পরে আসে বাইক সেবায়ও।
পাশাপাশি পাঠাও, সহজ, ওভাইসহ অনেকগুলো সেবা চালু হয়। তবে এখন পাঠাও ও উবারের বাইক ও গাড়িই বেশি চলে। যদিও বাইকাররা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাপে না গিয়ে চুক্তিতে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন।
অ্যাপে ভাড়া নেয়া সুবিধাজনক হলেও চালকদের মধ্যে কমিশনের বিষয়ে আপত্তি আছে। যত টাকা ভাড়া আসে, তার ২৫ শতাংশই উবারকে কমিশন হিসেবে দিয়ে দিতে হয়। এ নিয়ে তাদের আপত্তি গায়ে মাখেনি কোম্পানিটি। তবে পাঠাওয়ে কমিশন তুলনামূলক কম।
মোটরসাইকেলে বাইকারের আগুন দেয়ার ঘটনায় এই বিষয়টিও সামনে আনছেন চালকরা।
বেলাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা দিনভর ট্রিপ দিয়ে কষ্ট করে যে টাকা পাই, তার ২৫ পারসেন্ট অ্যাপকে দিয়ে দিতে হয়। ১০০ টাকার ২৫ টাকা তাদের দিয়ে খরচের পর আমাদের নিজেদের জন্য কিছুই থাকে না। এটা তো জুলুম। তাই আমাদের দাবি ১০ শতাংশ করা হোক।‘
পুলিশ অকারণে হয়রানি করে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘গাড়ি কোথাও ব্রেক করলে সেখানেই ধরে ফেলে ট্রাফিক পুলিশ মামলা দেয়। সরকার আমাদের জায়গা নির্ধারণ করে দিক। তাহলে আমরা যেখানে-সেখানে দাঁড়াব না।’
কর্মসূচি সম্পর্কে বেলাল বলেন, ‘মঙ্গলবার দিনব্যাপী আমরা অ্যাপে লগইন করব না। এতে করে অ্যাপ কোম্পানিরা বুঝবে আমরা ছাড়া তারা অচল। সে জন্য যাত্রীদেরও আমরা অনুরোধ করব তারাও যেন আগামীকাল সারা দিন কোনো অ্যাপ ব্যবহার না করেন।
‘পাশাপাশি সকালে আমরা প্রেস ক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন পালন করব।’
ছয় দাবি
চালকরা তাদের ছয়টি দাবি নিয়ে একটি ভার্চুয়াল লিফলেট তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রচার চালাচ্ছেন।
দাবিগুলো হলো
১. অ্যাপনির্ভর শ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিন, কর্ম ও সময়ের মূল্য দিন;
২. সব ধরনের রাইডে কমিশন ১০ শতাংশ নির্ধারণ করুন, মিথ্যা অজুহাতে কর্মহীন করা থেকে বিরত থাকুন;
৩. ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে রাইড শেয়ারিংয়ের যানবাহন দাঁড়ানোর জায়গা করে দিন;
৪. সব ধরনের পুলিশি হয়রানি বন্ধ করুন;
৫. তালিকাভুক্ত রাইড শেয়ারকারী যানবাহনগুলোকে গণপরিবহনের আওতায় অ্যাডভান্সড ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) মুক্ত রাখুন;
এবং
৬. গত বছর গ্রহণ করা সব এআইটি তালিকাভুক্ত যানবাহন মালিকদের ফিরিয়ে দিন।