প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উদযাপনে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের (সিইউবি) উদ্যোগে চলছে তিন দিনের বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী।
রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের শেরাটন ঢাকা হোটেলে সোমবার প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
‘বাংলাদেশ: উন্নয়নের ১ যুগ’ শিরোনামের এ প্রদর্শনীতে রয়েছে সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক যুগের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, বৈশ্বিক অঙ্গনে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আলোকচিত্র। শেখ হাসিনার জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের দুর্লভ ছবিও রয়েছে প্রদর্শনীতে।
দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানের শুরুতে কেক কাটেন অতিথিরা। পরে তারা প্রদর্শনীর বিভিন্ন আলোকচিত্র ঘুরে দেখেন।
‘বাংলাদেশ: উন্নয়নের ১ যুগ’ শিরোনামে আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানের শুরুতে কেক কাটেন অতিথিরাঅনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, যে কাজ তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি, সেই কাজগুলোকে যিনি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই মানুষটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে পরিক্রমা এবং পথনকশা তৈরি করা প্রয়োজন সেটি তিনি করেছেন। আমরা এখন আর হতদরিদ্র দেশ নই, উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হতে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের অধীনে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৯ ডলার। পাকিস্তান ২৫ বছরে ১২৫ ডলারে সেটা উন্নীত করেছিল। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে দায়িত্ব নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মাথাপিছু আয় ৮৯ থেকে ২৭৭ ডলারে উন্নীত করেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা ২ হাজার ২৭৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ খাতের বদলে যাওয়ার গল্প তুলে ধরেন মন্ত্রী। দেশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এই সাফল্য দেখে প্রতিবেশী দেশগুলো আমাদের ঈর্ষা করে, আর পাকিস্তান আফসোস করে।’
‘বাংলাদেশ: উন্নয়নের ১ যুগ’ শিরোনামে আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামতাজুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি হিসেবে নয়, প্রধানমন্ত্রী তার যোগ্যতা, মেধা, প্রজ্ঞা, দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি মমত্ব দিয়ে এটা অর্জন করেছেন। তিনি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য। তাই তার প্রতি বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উদযাপনে চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করায় ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতকে ধন্যবাদ জানান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিনকে স্মরণীয় করতে বঙ্গবন্ধুর কন্যার রাজনৈতিক সংগ্রাম ও বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সব কিছু চমৎকারভাবে এই চিত্র প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছে।
‘যখন আমরা প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখছিলাম আমি অবাক হয়ে খেয়াল করছিলাম পুরোনো দিনের ছবিগুলো সংগ্রহ করা, তারপর সেটিকে উপস্থাপন করা এবং ধারাবাহিকভাবে শেখ হাসিনার শৈশব, কৈশোর, তার ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং আধুনিক বা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের বিষয়গুলো যেভাবে সাজানো হয়েছে তা অসাধারণ।’
‘বাংলাদেশ: উন্নয়নের ১ যুগ’ শিরোনামে আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকপ্রধানমন্ত্রীর জীবন দর্শন তুলে ধরে তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশকে শুধু গণতন্ত্র উপহার দেননি, ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দেননি, প্রজন্মকে তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে যে মনস্তাত্ত্বিক নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটি শত শত বছর পরে ইতিহাস হয়ে থাকবে।
‘একটি দুর্নীতিগ্রস্ত ও দরিদ্র রাষ্ট্রকে তিনি মাত্র ১২ বছরের মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছেন। বিশ্বের ইতিহাসে এমন নজির দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না।’
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির চিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে হাজারো মানুষ শেখ হাসিনার জীবন সম্পর্কে জানতে পারছে মন্তব্য করে পলক বলেন, ‘আমি আশ্বস্ত করছি ও আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমার চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের সঙ্গে কথা হয়েছে, মাননীয় মন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি; আগামীকাল ফিজিক্যাল এক্সিবিশন শেষ হলেও আমরা ডিজিটাল এক্সিবিশন শুরু করব। যেটি চলবে বছরের পর বছর।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘আমরা এমন একজন প্রাজ্ঞ ও মহান নেতার জন্মদিন উদযাপনে এই আয়োজন করেছি, যিনি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে অনেক আগেই একজন প্রভাবশালী বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন। যার অনন্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে এক মর্যাদাশীল দেশের নাম।
‘সেই মহান নেতা, জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসূরি দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে এই চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত, অত্যন্ত আনন্দিত।’
‘বাংলাদেশ: উন্নয়নের ১ যুগ’ শিরোনামে আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতড. নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা পেয়েছিলাম মহান স্বাধীনতা। শুধু স্বাধীন দেশ নয়, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি। ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে সেই লক্ষ্য সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘যে বাংলাদেশ একসময় পরিচিত ছিল বন্যাকবলিত, দারিদ্র্যপীড়িত দেশ হিসেবে, সেই দেশই এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল; অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। এটা কেবলই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী এবং জাদুকরী নেতৃত্বের কারণে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ কনসেপ্ট বিশ্বকে আলোড়িত করেছে। কোভিড-১৯ সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব তাকে জায়গা করে দিয়েছে বিশ্বের সেরা ৩ নেতার কাতারে।’
চিত্র প্রদর্শনী সফল করে তুলতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান ড. নাফিজ সরাফাত।
এর আগে রোববার বেলা ১১টায় শেরাটন ঢাকা হোটেলে ফিতা ও কেক কেটে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এবং সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনেইট প্রিফন্টেইন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন ২০০৯ সালে। এরপর আরও দুবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন রূপকল্প ২০২১। সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরের গল্প শুধুই এগিয়ে যাওয়ার। একসময়ে যে বাংলাদেশ পরিচিত ছিল বন্যাকবলিত, দারিদ্র্যপীড়িত দেশ হিসেবে, সেই দেশই এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়ন-দর্শন তরুণদের সামনে তুলে ধরে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতেই এ আয়োজন বলে জানিয়েছে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।
প্রদর্শনীটি মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠান হবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায়। শেরাটন ঢাকা হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি থাকবেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।