রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় ট্রাফিক সার্জেন্ট মামলা দেয়ার প্রস্তুতিকালে ক্ষোভে নিজের মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছেন এক বাইকার।
ওই ব্যক্তির নাম শওকত আলম সোহেল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ব্যবসায় লোকসান হওয়ার পর তিনি উবারে যাত্রী টেনে সংসার চালাতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে এ ঘটনা ঘটে।
মিরাদুল মুনিম নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর সেটি ভিডিও করে ফেসবুকে শেয়ার করেন। মুহূর্তে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।
তিনি লেখেন, ‘মনের কষ্টে নিজের বাইকে আগুন! কাগজপত্রে সামান্য ত্রুটি থাকায় মামলা দেয় পুলিশ। তাই মনের কষ্টে গ্যাসলাইট দিয়ে নিজেই আগুন ধরিয়ে দেয় শওকত আলম সোহেল নামে এই হতভাগা আদম। অনেক চেষ্টা করেও আগুন নেভাতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ!’
ভিডিওতে দেখা যায়, বাইকে আগুন দিয়ে সোহেল উদভ্রান্তের মতো চিৎকার করছেন। প্রত্যক্ষদর্শী একজন পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। তখন সোহেল এসে তাকেই বাধা দেন। বলেন, ‘কেউ যাবেন না, আপনারা কেউ যাবেন না।’
অন্য একজন সোহেলকে বলেন, ‘ভাই মাথা ঠান্ডা করেন।’
পুলিশ জানিয়েছে, সার্জেন্ট এই ঘটনার পরে আর মামলা দেননি। আগুন নিভিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাইকচালক ও দায়িত্বে থাকা সার্জেন্টকে থানায় নেয়া হয়। দুই পক্ষের বক্তব্য শোনেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ।
এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে জানা গেছে বাইকার শওকতের বাড়ি কেরানীগঞ্জে। করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে তিনি স্যানিটারি সামগ্রীর ব্যবসা করতেন। এতে তার লোকসান হয়।
জীবিকা নির্বাহে শওকত দুই মাস ধরে বাইকে যাত্রী পরিবহন করতেন। তিনি অ্যাপভিত্তিক রাইড সেবা উবার ব্যবহার করতেন।
কয়েক দিন আগে পল্টনে ট্রাফিক আইন অমান্য করায় একটি মামলা হয় শওকতের নামে। এ মামলার টাকা পরিশোধ করার পর সকালে আবার মামলা দিতে যাচ্ছিলেন বাড্ডা এলাকার দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট। তখন ক্ষুব্ধ হয়ে বাইকের ট্যাংকি থেকে তেল বের করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন শওকত।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক আল ইমরান বলেন, ‘মোটরসাইকেলে মালিক কেন আগুন দিয়েছেন, তা জানি না। সিনিয়র স্যাররা এটা নিয়ে কথা বলছেন।’
বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ মিয়া বলেন, ‘থানায় ওসি স্যার গাড়ির মালিক ও সার্জেন্টকে নিয়ে বসেছেন। কী হয়েছে, তা স্যার বের হলে জানতে পারব।’
পরে ওসি আজাদ বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। পুলিশের কোনো গাফিলতি থাকলে সিনিয়র স্যাররা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
শওকত কী বলেছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আর্থিক কষ্টে আগুন দেন বলে জানিয়েছেন তিনি। মামলার টাকা পরিশোধ করে চলতে পারছিলেন না।’