পাখির কলকাকলিতে মুখরিত কাজিপাড়া গ্রামে মাতামাতি চলছে পাখি নিয়ে। গাছে গাছে বাসা বেঁধেছে নানা প্রজাতির পাখি। সেগুলো যখন ডানা মেলে তখন মুগ্ধ হয় গ্রামের মানুষ। পাখির নিরাপত্তার বিষয়েও সচেতন গ্রামবাসী।
এই গ্রামের অবস্থান জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা সদর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে ক্ষেতলাল-বগুড়া সড়কের পাশে।
এখানে গেলে গাছে গাছে দেখা যায় বক, পানকৌড়ি, শামুকখোল, রাতচোরা, ভেলাসহ বিভিন্ন পাখি। নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে দিন দিন বাড়ছে পাখির সংখ্যা।
স্থানীয় লোকজনের মতে, এই গ্রামের পাখির সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
কাজিপাড়ার কাজি রফিকুল ইসলাম চপল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জন্মের পর থেকে দেখে আসছি গ্রামের এই পাখিগুলোকে। আগে হাজার হাজার সাদা বক থাকত। এখন বকের পাশাপাশি শামুকখোল, পানকৌড়ি, রাতচোরা ও ভেলাও বিভিন্ন গাছে বাসা বেঁধেছে।’
পাখিদের বিষ্ঠা ও উচ্ছিষ্ট খাবারের দুর্গন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো সমস্যা হয় না। গোটা গ্রামের মানুষই পাখিগুলোকে ভালোবাসে।’
প্রতিদিন ভোরবেলায় পাখিরা বেরিয়ে যায় খাবারের সন্ধানে, ফেরে সন্ধ্যা হলে। আশপাশের খাল-বিল ও ফসলের মাঠ থেকে পোকামাকড়, মাছ, শামুক, ঝিনুক খেয়ে এরা বাঁচে। পাখিদের সুবিধার জন্য অনেক গাছে মাটির পাত্র ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
আব্দুল আলিম বলেন, ‘পড়ন্ত বিকেলে পাখিগুলোকে দেখতে খুব ভালো লাগে। পাখিরা ওই সময় ডানা মেলে ঝাঁক ধরে নীড়ে ফেরে। পাখিদের জন্যই গ্রামটি এ এলাকায় বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে।’
বাইরে থেকে এসে কেউ যেন কোনো পাখিকে না মারে সে জন্য সবসময় সচেতন থাকে গ্রামের মানুষ। প্রায় প্রতিদিনই পাখি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে কাজিপাড়ায় ভিড় জমান দর্শনার্থী।
ক্ষেতলাল পৌর সদরের থানাপাড়া মহল্লার আজিজুল হক বলেন, ‘কাজিপাড়ায় ঢুকলেই এক অপরূপ দৃশ্যের দেখা মেলে যা চোখে না দেখলে অনুভব করা কঠিন। কোথাও বসে বসে সাদা বক পাখা ঝাপটাচ্ছে, কোথাও চেঁচামেচি করছে শামুকখোল, রাতচোরা অথবা পানকৌড়ি। শব্দ পেলেই উড়াল দেয় চতুর পানকৌড়ি।’
এই গ্রামের পাখি সংরক্ষণে সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উদ্দীপন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা গ্রামের প্রবেশ মুখে ‘কাজিপাড়া পাখি পল্লি’ লেখা একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে।
কাজী রিয়াজুল কবির বলেন, ‘এই পাখিগুলো আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য। বলতে গেলে এখন পাখির সঙ্গেই আমাদের বসবাস। যদিও আমরা কাউকে পাখি শিকার করতে দেই না, তারপরও সরকারিভাবে এই গ্রামকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা দিয়ে এদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিলে আরও অনেক পর্যটক আসবে।’
ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ. এফ. এম আবু সুফিয়ান বলেন, ‘পাখিদের অভয়ারণ্য করতে গ্রামবাসীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে সচেতনতামূলক সভার পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’