৪ মিনিটের একটি ঘরোয়া আলোচনার ভিডিও ফাঁসের পর বেকায়দায় পড়া গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের এবার ৫০ মিনিটের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
৪ মিনিটের ভিডিওটি এই ৫০ মিনিটের ভিডিও থেকেই কেটে ফেসবুকে ছাড়া হয়। তাতে মুক্তিযুদ্ধের শহিদের সংখ্যা ও বঙ্গবন্ধুর দেশ স্বাধীন করার উদ্দেশ্য নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য থাকার অভিযোগ তুলে মেয়রের শাস্তির দাবিতে গত বুধবার থেকে টানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
ভিডিওতে গাজীপুর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানকে নিয়েও আপত্তিকর বক্তব্য আছে।
সে সময় মেয়র ছিলেন দেশের বাইরে। বুধবার রাতে দেশে ফিরে এক ভিডিওবার্তায় তিনি ভিডিওটিকে বানোয়াট বলে দাবি করেন। পরে শুক্রবার এক সমাবেশে তিনি ‘চক্রান্তকারীদের’ মুখোশ উন্মোচনের ঘোষণা দেন।
বিরোধীরা সমাবেশ ডাকলে নিজের শক্তি দেখান গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ফাইল ছবি
তবে মেয়রবিরোধী বিক্ষোভ থামছে না আর এর অংশ হিসেবে শনিবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে ৫০ মিনিটের পুরো রেকর্ডটি। এই রেকর্ডে আগের বক্তব্যের পাশাপাশি নতুন কিছু কথা মেয়রবিরোধী সমালোচনাকে আরও উসকে দিয়েছে।
মেয়র জাহাঙ্গীর এই ভিডিওটিকেও বানোয়াট বলে চাপ এড়াতে চাইছেন।
যা আছে ৫০ মিনিটের নতুন ভিডিওতে
ভিডিওটির ২৬ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করেন মেয়র। ২৮ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের দিকে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলকে নিয়ে মন্তব্য করতে দেখা যায় জাহাঙ্গীরকে।
২৯ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে সেই ব্যক্তি মেয়রকে বলেন, ‘আপনি আগুনকে (আজমত উল্লাহ খান) পানি বানাইয়া ফেলছেন। কীভাবে করলেন?
তখন মেয়র আজমত উল্লাহ খানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘কটূক্তির’ অভিযোগে গাজীপুর সিটির মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের একাংশের বিক্ষোভ। ফাইল ছবি
৩২ মিনিটের সময় মেয়র বলেন, তিনি ৭০০ কিলোমিটার সড়ক করেছেন, ড্রেন ও এলইডি লাইট লাগিয়েছেন।
ভিডিওর ৩৩ মিনিটে মেয়র সেদিনকার তারিখ ও সময় বলেন। ভিডিওটি যে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর ধারণ করা হয়, সেটি এখানে স্পষ্ট বোঝা যায়।
৩৩ মিনিটের দিকে প্রতিমন্ত্রী রাসেলকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীর।
৩৪ মিনিটে মেয়র কাউন্সিলর মামুন মণ্ডলকে নিয়ে মন্তব্য করেন। মামুন পৃথিবীতে সবচেয়ে অসুখী মানুষ বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘সে যেকোনো সময় মানুষের দ্বারা বা দুর্ঘটনায় মারা যাবে।’
মামুন মণ্ডল নগরীর ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং মেয়রবিরোধী সাম্প্রতিক কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
মেয়র বলেন, ‘তার কাউন্সিলর পদ আমি ৫ মিনিটে ডইলা দিতে পারি। এমনকি ভিডিওর ১৭ মিনিটে মেয়র কাউন্সিলরের জন্মপরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
কাউন্সিলর মামুন মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেছেন, জাহাঙ্গীর আলম যার সঙ্গে কথা বলেছেন, তাকে তারা শনাক্ত করতে পেরেছেন। কিন্তু তার জীবনের ঝুঁকি বিবেচনায় তিনি নাম প্রকাশ করবেন না।
মেয়রের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ। ফাইল ছবি
তার অভিযোগ, জাহাঙ্গীর কার্যত তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। বলেন, ‘আমাকে প্রত্যেক দিন মাইরা ফেলানো উচিত, আমাকে মাইরা ফেলা দরকার, অথবা আমাকে অন্য মানুষ মাইরা ফালাইব। আমি মারা যাব। হেয় কি ভাড়াটিয়া খুনি নিয়োগ করছে কি না যে খুনিরা আমারে মারব সে নিশ্চিত জানে। আল্লাহতাআলা ভবিষ্যৎ জানে। সে তো জানার কথা না। তিনি কি ভবিষ্যৎ জানার জন্য আবার নতুন কোনো যন্ত্র আবিষ্কার করছে কি না?’
মামুন বলেন, ‘কথা পরিষ্কার, আমার কিছু হলে দায়ভার তার নিতে হবে। আমি বহু আগেই তার (মেয়র) বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় জিডি করে রাখছি।’
জাহাঙ্গীর যা বলছেন
৫০ মিনিটের এই ভিডিওটির ব্যাপারে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নতুন ভিডিওটি শুনি নাই। এগুলা কারা করতেছে, কী করতেছে আমি তো জানি না৷
‘অনেকের মেয়র হওয়ার খায়েশ, তারা এগুলো করতেছে হয়তো। তবে আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আইনজীবীদের বলেছি জিনিসটা বাহির করুক।’
ভিডিওতে কণ্ঠে পুরোপুরি মিল থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘অনেকে দেখা যায় কণ্ঠ মিলাইয়া ফেলে। হুবহু শব্দ দেখা যায় মিলায়। এগুলো যারা বিশেষজ্ঞ আছে তারা এটা যাচাই-বাছাই করুক।’
ভিডিওটিতে মেয়র যার সঙ্গে কথা বলছেন, তিনি গাছা এলাকার এক তাঁতী লীগ নেতা বলে নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘আমি কনফার্ম না হয়ে কিছু বলতে পারছি না। আমি আরেকজনের যে বলব তার কি না সেটাও জানি না। আমার নির্বাচনকে ধরে আমার পার্টির সেক্রেটারি ও মেয়র হওয়া নিয়ে তারা এটা সব সময় করে। আজকে এটা নতুন না।‘
বিক্ষোভে বৃহস্পতিবার ঢাকা-গাজীপুর ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল বেশ কিছু সময়। ফাইল ছবি
কাউন্সিলর মামুন মণ্ডলের প্রসঙ্গ টেনে মেয়র বলেন, ‘আমার জানামতে তিনি ৩০-৩৫টি মামলার আসামি। আমাদের ছাত্রলীগের এক কর্মীর হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি। তার সঙ্গে আমার তেমন একটা কথা হয় না।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানের অনুসারীরাও বিক্ষোভ করেছেন, এই বিষয়টি তুলে ধরলে মেয়র বলেন, ‘উনি সবাইকে ফোন করে আসতে বলছেন বলে আমি জেনেছি। বাকিটা ওনারাই জানে, আমি সঠিকটা জানি না।’
বিষয়টি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে জানাবেন জানিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি দেশের বাহিরে ছিলাম। দলের সভাপতিও (শেখ হাসিনা) দেশের বাহিরে। এখন বিষয়টি কেন্দ্রে জানানোর জন্য প্রস্তুত আছি। সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি জানাব।’