সহপাঠীদের সঙ্গে ভিডিও অন রেখে অনলাইনে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাজীব মোহাম্মদ। পরীক্ষায় থাকা অবস্থায় রাজীব টের পেয়েছেন, মায়ের কিছু হয়েছে। জুম প্ল্যাটফর্মেই কেঁদে ফেলেন রাজীব। দায়িত্বরত শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে পরীক্ষা থেকে বের হওয়ার পর জানলেন, মা আর পৃথিবীতে নেই।
রোববার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, রাজীবের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায়। সেখানে বসেই তিনি পরীক্ষায় অংশ নেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শরীফ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ সাড়ে ৯টা থেকে আমাদের অনলাইন পরীক্ষা শুরু হয়। আধা ঘণ্টা পর রাজীব হঠাৎ ম্যামকে ডাকা শুরু করে। ম্যাম হয়তো কিছুক্ষণের জন্য অনলাইনের বাইরে ছিলেন। এর মধ্যেই হঠাৎ আমরা একটা চিৎকার শুনতে পাই। রাজীব কেঁদে ফেলে। পরে ম্যাম এসে জিজ্ঞাসা করেন, রাজীব, তোমার কী হয়েছে? রাজীব জানায়, ম্যাম আমার আম্মুর কী যেন হয়েছে। আমাকে লিভ নিতে হবে। পরে ম্যাম কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে রাজীবকে বের হওয়ার অনুমতি দেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা। ফাইল ছবি
শরীফ মিয়া বলেন, পরীক্ষা শেষে বের হওয়ার পরে শুনতে পাই রাজীবের আম্মু মারা গেছেন। আসলে এটা কঠিন পরিস্থিতি।
অনলাইন পরীক্ষার পরিদর্শক এবং বিভাগের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা নেহরীর খান বলেন, ‘অনলাইন পরীক্ষার ভিতর রাজীব জানায়, সে মায়ের কাছে যাবে। তারপর সে লিভ নিল। পরীক্ষা শেষে আমরা জানতে পারি তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে।’
রাজীবের পরীক্ষার বিষয়ে বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন শরীফ মিয়া ও তার অন্য বন্ধুরা। শরীফ মিয়া জানান, বিভাগ কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছে, পরীক্ষার ফল পেতে রাজীবের কোনও সমস্যা হবে না।
রাজীবের মায়ের মৃত্যুর পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন রাজীবের অন্য এক সহপাঠী আল আমিন সরকার। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘অনলাইন পরীক্ষা চলছিল। প্রায় ৩০ মিনিট অতিক্রান্ত হয়েছে এমন অবস্থায় হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। ডিসপ্লেতে তাকিয়ে দেখি বন্ধু রাজীবের চোখে পানি। রাজীব বলতেছে, ম্যাম, ম্যাম..., ম্যাম, আমি কি লিভ নিতে পারি! আমার মায়ের কী যেন হয়েছে।
‘এক মিনিট পর লিভ নেয়ার অনুমতি পেলেন তিনি। এই তো কিছুক্ষণ আগে শুনলাম তার মা আর ইহজগতে নেই! আমরা পরীক্ষা শেষ করে কেবলই একটা ফুরফুরে মেজাজে হাসিখুশিতে মেতে উঠছিলাম আর বন্ধুর জীবনে কত বড় পরীক্ষা হয়ে গেল। মৃত্যু কত নিষ্ঠুর, কখন ডাক আসবে কেউ জানে না। আল্লাহ ওনাকে মাগফিরাত দান করে জান্নাত দান করুক এবং আমার বন্ধু ও তার পরিবারকে যেন ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করেন, আমিন।’
রাজীব মোহাম্মদের মায়ের জানাজা কখন হবে, সেটি এখনও জানা যায়নি।