ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় দেড় বছর ধরে কারাবন্দি সাংবাদিকের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে বরগুনায়।
শহরের টাউনহল এলাকার অগ্নিঝরা একাত্তর চত্বরে রোববার বেলা ১১টায় এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
বন্দি সাংবাদিকের নাম জামাল মীর, তিনি বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম ও দৈনিক বর্তমানের বরগুনা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।
সমাবেশে তার পরিবার, এলাকাবাসী ও বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে জামালের মা রুনু বেগম বলেন, ‘দেড় বছর ধরে বড় ছেলে জামাল কারাবন্দি। দিনের পর দিন অপেক্ষা করি ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদব। কিন্তু ছেলেকে কাছে পাইনি। করোনার জন্য কারাগারে গিয়ে দেখাও করতে পারিনি। আমি মনে হয় আমার ছেলেকে দেখে মরতে পারব না।’
জামালের বাবা জালাল মীর বলেন, ‘ছেলের জামিন করাতে গিয়ে বিচারিক আদালত থেকে উচ্চ আদালতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। টাকা শেষ হওয়ার পরে জমি বিক্রি করেও ছেলের জামিনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমরা ব্যর্থ। এখন আমাদের তিন বেলা খাবার জোটেনা। জামালের মা অসুস্থ, একটা ওষুধ কিনে দেয়ার সামর্থ্য নেই আমার।’
কারাবন্দি সাংবাদিকের স্ত্রী লিমা বেগম বলেন, ‘মানসম্মত খাবারের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে আমাদের মেয়ে তাহিয়া। বঞ্চিত হচ্ছে বাবার ভালোবাসা থেকে। মেয়ের পায়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না।’
বরগুনার প্রবীণ সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসান ঝন্টু বলেন, ‘জামাল বরগুনায় সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রচার করতেন। একই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস দপ্তরের অনিয়ম, দুর্নীতি প্রচার করে অসংখ্য প্রতিবেদন করেছেন। জামাল সব চোর-বাটপারদের চোখের শুল হয়েছিলেন। এসব চোরদের সঙ্গে কিছু সাংবাদিকদের যোগসাজশে জামালকে ফাঁসানো হয়েছে।’
বরগুনা সদরের পানামা রোড এলাকার এক নারী গত বছরের ২৪ এপ্রিল সম্মানহানি এবং তাদের বসতঘরে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের অভিযোগ করেন জামালসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। পরে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জামালসহ ৭ জনের নামে মামলা করেন।
একই বছরের ৬ মে লামিয়ার করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামাল ও নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের প্রতিনিধি সুমন সিকদারসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিছুদিন পরে সুমন সিকদারসহ ৫ জনের জামিন হলেও কারাগারেই আছেন জামাল।