বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উৎসব তৈরির কারিগররা কতটুকু আনন্দে

  •    
  • ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৩:২৬

চিত্রশিল্পী তরুণ ঘোষ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসব শিল্পী মূলত কোনো প্রতিষ্ঠানিকভাবে বেড়ে ওঠেন না। যার কারণে কারও নজরে থাকেন না। তারা মূলত জাত শিল্পী। এদের কোনো ট্রেনার নাই। সব রকম সুবিধাবঞ্চিত তারা। প্রতিমা তৈরি করে যে সম্মানি পান তা খুব লজ্জাজনক। আনন্দ তৈরি করে নিজেরাই নিরানন্দ জীবন যাপন করেন।'

শেষ সময়ে রাজবাড়ী জেলার শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি চলছে। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।

রাজবাড়ীতে এবার ৪৪১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।

পৌর শহরের দুধ বাজার মন্দিরে প্রতিমা তৈরি করেছেন দুলাল পাল। কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি জানান, করোনার কারণে গেল দুবছর পূজার আড়ম্বর না থাকায় তাদের আয়ের পথ বন্ধ ছিল। এবারও করোনার কারণে মানুষের হাতে পয়সা নেই। যার কারণে পূজার খরচ কমাতে হচ্ছে।

দুলাল পাল জানান, এবার পূজায় তার দুইটা প্রতিমা তৈরির অর্ডার আছে। তবে বাজেট খুব কম। প্রতিটি মণ্ডপের জন্য বাজেট নিয়েছেন ৫০ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি করতে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। বাদবাকি টাকা আমি ও আমার সহকারীরা ভাগ করে নিই। এতে অবশিষ্ট বেশি টাকা থাকে না। সারা বছরের এই সময়েই আমাদের আয়ের একটা বড় উৎস দুর্গাপূজা।

দুলাল পালের সহযোগী উত্তম বলেন, ‘আমরা প্রতিমা তৈরি করে যে পয়সা পাই তাতে সংসার চলে না। প্রতিদিনের শ্রমিকের মজুরি ৫০০ টাকা করে পেলেও ১৫ দিনে ৭-৮ হাজার টাকা আয় হয়। ২০ হাজার টাকার একটা মন্দিরের অর্ডার নিলে যাতায়াত খরচ, মাটি খরচ, রং খরচ বাদ দিলে আমাদের হাতে কয় টাকা থাকে? তার ওপর প্লাস্টিকের ব্যবহারের কারণে মাটির বাসন কেউ ব্যবহার করে না। সারা বছর এটাই আমাদের আয়ের বড় উৎস। উৎসবানন্দ তৈরি করতে আমরাই আনন্দহীন হয়ে পড়ছি।‘ প্রতিমা তৈরির আরেকজন কারিগর পলাশ পাল বলেন, ‘দিন দিন আমাদের অবস্থা খারাপই হচ্ছে। সারা বছর তেমন ইনকাম থাকে না। এই দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করেই কিছু আয় হয়। বিগত বছরের তুলনায় এবার আয় কম হচ্ছে। আমাদের সন্তান আর এ পেশায় আগ্রহী হচ্ছে না। তা ছাড়া, দিন দিন মাটির পরিবর্তে শোলা ধান, প্লাস্টিকের বোতলসহ নানা উপকরণে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে থিম পূজার নামে। এগুলো কতটুকু শাস্ত্রসিদ্ধ তা পণ্ডিতরা ভালো বলতে পারবেন। যদি ও আমাদের দেশে এর ব্যবহার এখনও তেমন করে শুরু হয় নাই। এগুলো ব্যবহারে মাটির ব্যবহার কমে গেলে আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।‘

পলাশ পালের সহযোগী উজ্জ্বল কুমার পাল বলেন, ‘আমরা ৭টি মন্দিরের কাজ নিয়েছি। এই মন্দিরের আয় দিয়েই চলে সারা বছর। তবে এবার করোনার জন্য সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। গতবারের থেকে অনেক কম রেটে কাজ করতে হচ্ছে। আগে যে কাজ ৪০ হাজারে করেছি এবার সেটা ৩০ হাজার ২০ হাজারেও করতে হচ্ছে। এদিকে আবার সরঞ্জামাদির দামও বেশি। রাত-দিন একনাগারে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের তো এই কাজ ছাড়া কোনো কাজ নেই। তা ছাড়া, আমাদের খোঁজখবরও কেউ রাখে না।‘

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রদীপ্ত চক্রবর্তী কান্ত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজার উৎসব পালনে মণ্ডপগুলোতে সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আমরা বৈঠকের প্রস্ততি নিয়েছি।‘

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যে অনুদান পাওয়ার কথা সেটা পেয়ে থাকি প্রতিবছরই।‘

প্রতিমা তৈরির যারা কারিগর তারা আনন্দ তৈরি করে নিজেরাই নিরানন্দ জীবন যাপন করছেন।এ বিষয়ে চিত্রশিল্পী তরুণ ঘোষ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসব শিল্পী মূলত কোনো প্রতিষ্ঠানিকভাবে বেড়ে ওঠে না। যার কারণে কারও নজরে থাকেন না। তারা মূলত জাত শিল্পী। এদের কোনো ট্রেনার নাই। সব রকম সুবিধাবঞ্চিত তারা। প্রতিমা তৈরি করে যে সম্মানি পান তা খুব লজ্জাজনক। আনন্দ তৈরি করে নিজেরাই নিরানন্দ জীবন যাপন করেন।'

এ বিভাগের আরো খবর