‘আমি নির্বাচিত হলে ছয় মাসের মধ্যে “নলুয়া ভূঁইয়ারহাট আশ্রয়ণ প্রকল্প সেতু” নির্মাণ করে দিব,’ বলেছিলেন এখনকার সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেটাও ২০০৮ সালে, যখন তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে গিয়েছিলেন।
সেতুমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির এক যুগ পার হয়ে গেলেও নির্মাণ করা হয়নি ওই সেতু। অথচ টানা তিনবার তিনি ওই এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নলুয়া ভূঁইয়ারহাট আশ্রয়ণ প্রকল্প সেতুর কাছে শনিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, নোয়াখালী খালের ওপর একটি কাঠের সেতু। সেতুর পশ্চিম পাড় ভেঙে হেলে পড়েছে। তার ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে স্কুলশিক্ষার্থী তানিয়া আক্তার, বিলকিস আক্তার, মো. এমরান হোসেন, আশ্রয়ণের বাসিন্দা আরিফুল ইসলামসহ কয়েকজন পথচারী।
পাকা সেতুর জায়গায় ২০০৫ সালে স্থানীয় লোকজন বাঁশ দিয়ে ৫০০ ফুট লম্বা সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত শুরু করে। এরপর নলুয়া এলাকায় জনবসতি বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০০৮ সালের প্রথম দিকে স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে ৪০০ ফুট দীর্ঘ কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়।
প্রতিবছরই সেতু সংস্কার করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানির চাপে সেতু হেলে পড়ে এবং কিছু অংশ ভেঙে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
সেতুটির পূর্ব পাশে নলুয়া ২ নম্বর ওয়ার্ডে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৫০ পরিবার এবং সরকারের আবাসন প্রকল্পের ১১০ পরিবারসহ সাড়ে ৫ হাজার মানুষের বসবাস। প্রতিদিন এ সেতু দিয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ যাতায়াত করে।
এ মৌসুমে সেতুর পাড় থেকে মাটি সরে যাওয়ায় এবং সেতু হেলে পড়ায় চরম ঝুঁকির মধ্যে যাতায়াত করতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
আশ্রয়ণ ও আবাসন প্রকল্পের লোকজন জানান, গত পাঁচ বছরে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা আবু সাঈদের সাড়ে তিন বছরের ছেলে এবং নুরুল আমিনের চার বছরের নাতি। সেতু থেকে পড়ে আরও অনেকে আহত হয়েছে।
ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম ভূঁইয়া পারভেজ বলেন, সেতু না থাকায় ২০০৫ সাল থেকেই নলুয়া ২ নম্বর ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতুর পশ্চিম পাশে নলুয়া ১ নম্বর ওয়ার্ডে স্কুল, মাদ্রাসা, বাজার, মসজিদ এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থান হওয়ায় সেতুর পূর্ব পাশের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রয়ণ ও আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাসহ স্থানীয় লোকজনকে নিয়মিতই সেতু পারাপার করতে হয়।
সেতুটিকে কেন্দ্র করে কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক উল্যাহ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পাকা সেতু না থাকায় ওই সড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে।
সাবেক এই ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচনী প্রচারণায় এসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছিলেন, তিনি নির্বাচিত হলে ৬ মাসের মধ্যে সেতুটি নির্মাণ করে দেবেন। কিন্তু উনি এই এলাকা থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত হওয়ার পরও এখনও সেতুটি নির্মাণ হয়নি।
ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মুন্নাফ বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ জন্য আমরা উপজেলা পরিষদে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল শাখায় প্রস্তাব পাঠিয়েছি। সেটি পাস হলে সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
কবিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা আক্তার বলেন, ‘কাঠের সেতু হেলে পড়ার বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। আপাতত লোকজন চলাচলের জন্য সেতুটি সংস্কার করা হবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে সেতুটি নির্মাণের প্রস্তাব পাস হলে আগামী শুকনা মৌসুমেই নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।’