‘বুঝতে শেখার পরই প্রতিমার সঙ্গে পথ চলা শুরু। হাতেখড়ি বাবার হাতে। ১০ বছর বয়স থেকেই প্রতিমা তৈরি করি। নিখুঁতভাবে মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রতিমা তৈরি করতেন বাবা। যখন প্রতিমা বানানো শেখাতেন মনোযোগ দিয়ে শুনতাম ও দেখতাম। নিজেও এখন এরকম বানাতে পারি।’
কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার রাশড়া গ্রামের ভারত পাল।
৫০ বছর ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় তৈরি করছেন প্রতিমা। শিল্পীর ছোঁয়ায় তৈরি করছেন দেবী দুর্গাকে।
কয়েক দিন বাদেই আসছেন দেবী। তাই বেশ ব্যস্ত ভারত। দুর্গার পাশাপাশি চলছে লক্ষ্মী, স্বরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের প্রতিমা তৈরির কাজ।
১১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় শারদীয় দুর্গোৎসব।
সরেজমিন দেখা যায়, কোনো মণ্ডপে হচ্ছে কাঠামো তৈরি আবার কোথাও হচ্ছে মাটির কাজ। শিল্পীরা দেড় মাস আগে থেকেই শুরু করেন প্রতিমা তৈরির কাজ।
প্রতিমা শিল্পী ভারত পাল বলেন, ‘প্রতিমা তৈরি আমার আত্মার সঙ্গে মিশে আছে। মনের আবেগ আর ভালোবাসা দিয়েই কাজটি করি।
‘৫০ বছর থেকে প্রতিমার সঙ্গে কাটছে জীবন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১৪টি প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে।’
এ বছর প্রতিমা তৈরির সরঞ্জামের দামটাও আগের চেয়ে বেশি বলে জানান ভারত পাল।
রাশড়া গ্রামের যাদব পাল জানান, ভারত ছোট থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ করছে। বাসাইল ছাড়াও পাশের উপজেলা সখীপুরে প্রতিমা তৈরিতে ভারতের সুনাম রয়েছে।
উপজেলার জিকাতলী পাড়া গ্রামের শীতল চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি মাঝে মাঝে কাকার প্রতিমা তৈরি দেখতে যেতাম। যতই দেখতাম কাকার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। কী অসাধারণ, নিখুঁত কারুকাজ।’
বাসাইল উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ সুনীল রায় স্বপন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার কারণে আমরা বড় দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ঈশ্বরের কৃপায় প্রকোপ কিছুটা কমায় পূজার আয়োজন ও প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে।
‘রাত-দিন কারিগররা পরিশ্রম করছেন। গত বছর ৪২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ বছর ৫৬টি মণ্ডপে পূজা হবে।’
এবার সরকারি সরকারি নির্দেশনায় কিছুটা ছাড় দেয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে কড়াকড়ির কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ীই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
শারদীয় দুর্গা পূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতার কথাও বলেন তিনি।