ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে কিট সংকটে প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। এতে তাৎক্ষণিক করোনা পরীক্ষার ফল জানতে পারছে না রোগীরা।
র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বন্ধ থাকায় এখন হাসপাতালটিতে শুধু রাজধানীর আরটি-পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার জন্য নমুনা নেয়া হচ্ছে। সেই পরীক্ষার ফল পেতেই লেগে যাচ্ছে ১৪ দিনের বেশি। অথচ করোনা আক্রান্তের দ্বিতীয় পরীক্ষা করা হয় সাধারণত ১৪ দিন পর।
হাসপাতালের বেশ কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজন জানান, র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে কেউ করোনায় আক্রান্ত কি না, সেটি দ্রুত জানতে পারতেন। তবে ঢাকায় পিসিআর ল্যাবের পাঠানো নমুনার ফল জেলায় আসতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগছে। কখনও কখনও ১৭ দিনও সময় লেগে যায়।
তারা আরও জানান, উপসর্গ থাকা কেউ করোনায় আক্রান্ত কি না, তা জানতে দীর্ঘ সময় লাগায় করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ ফল না জানায় অনেকেই সতর্ক থাকছেন না। হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য প্রথম দফায় ৫০০ কিট, দ্বিতীয় দফায় ৬ হাজার, তৃতীয় দফায় ৪ হাজার এবং চতুর্থ দফায় ২ হাজার কিট পাঠানো হয়।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর হাসপাতালটিতে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়। চলতি বছরের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত হাসপাতালে ১১ হাজার ৬৮টি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রতিদিন এখানে ১৫০ থেকে ২০০ রোগীর অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হতো। এক দিনে সর্বোচ্চ ২০৭ জনের অ্যান্টিজেন পরীক্ষাও হয়েছে।
জেলা শহরের দক্ষিণ কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, ‘১২ আগস্ট আমার স্ত্রীর অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য নমুনা দিলে তার করোনা পজিটিভ আসে। একই দিন ঢাকার পিসিআর ল্যাবের জন্য নমুনা দিই। গত ২৩ আগস্ট নমুনার ফল পাই। সেটিতেও তার পজিটিভ আসে।
‘তবে গত ২ সেপ্টেম্বর অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে গেলে জানতে পারি কিট নেই। তাই নমুনা দিয়ে আসি পিসিআর ল্যাবের জন্য। সেই পরীক্ষার ফল এসেছে ১৭ সেপ্টেম্বর।’
লিজা নামের এক নারী বলেন, ‘আগে আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে পারতাম। এখন সেটি বন্ধ রয়েছে। যদি পিসিআর ল্যাবে পাঠানো নমুনা পরীক্ষার ফল দ্রুত পাওয়া যায়, তাহলে এটি নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
‘কিন্তু বিপত্তিটা হলো পিসিআর ল্যাবের ফল পেতে এখন ১০-১৫ দিন সময় লেগে যায়। এতে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই দ্রুত অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য কিট সরবরাহের জন্য সরকারসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে অনুরোধ রইল।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. এনামুল হাসান জানান, কিট সংকটের কারণে বর্তমানে হাসপাতালে করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। তবে পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হাসপাতালে কিট সরবরাহ করা হয়। তবে কিটের বিষয়টি সিভিল সার্জন দেখেন।
সিভিল সার্জন মো. একরামুল্লাহ বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রয়োজন অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক নিজেই কিট নিয়ে আসেন। তা ছাড়া অনেক সময় আমিও নিয়ে আসি। কিছুদিনের মধ্যেই কিট চট্টগ্রাম থেকে আনা হবে। কিট পেলে অ্যান্টিজেন কার্যক্রম আবার শুরু হবে।’