সড়কের দেড় কিলোমিটার জুড়ে দুপাশে সারি সারি তাল গাছ। সেই গাছের নিচে দুই পাশে বসেছে তালের বাহারি পিঠার দোকান।
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গা তালতলী সড়কে শুক্রবার হয়েছে এমনই পিঠা উৎসব। দুপুর ২টা থেকে থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে এ উৎসব।
তালতলী সড়কের মনোরম সৌন্দর্য পর্যটকদের জানাতে পিঠা উৎসবটির আয়োজন করে উপজেলা পরিষদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
উৎসবে বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক সংগঠন ও ব্যক্তি নানা পদের তালের পিঠা নিয়ে অংশ নেয়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই জমে ওঠে উৎসব। দূর-দূরান্ত থেকে আসে নানা বয়সী মানুষ। নানা পদের পিঠা খাওয়ার পাশাপাশি প্রিয়জনদের জন্যও নিয়ে যান তারা।
নওগাঁ শহরের তাজের মোড় থেকে পিঠা উৎসবে এসেছিলেন সন্তোস কুমার। তিনি বলেন, ‘ঘুঘুডাঙ্গায় মাঝে মাঝে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসি। আজ তালের পিঠা উৎসব হবে আগেই জানতে পেরেছি। তার চলে আসলাম।
‘এসে দেখি এমন চমৎকার আয়োজন। তাল দিয়ে দেখছি প্রায় ২০-২৫ রকমের পিঠা। এখানেই কিছু পিঠা খেয়েছি। আর বাড়ির সদস্যদের জন্যও কিছু নিয়েছি।’
পিঠা উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। ছবি: নিউজবাংলা
স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিয়া খাতুন বলে, ‘ভাইয়া তাল দিয়ে এতগুলো পিঠা আমি আগে কখনও দেখিনি। আমি চার রকমের পিঠা খেয়েছি হৃদয়হরণ, পাকান, তালের ফুলঝড়ি ও তালের খির পিঠা। খেতে অনেক মজা লেগেছে। প্রতি বছর এমন তাল পিঠার উৎসব হোক।’
একটি পিঠার দোকানের মালিক সৃষ্টি বেগম বলেন, ‘আমি জেলার বিভিন্ন স্থানে মেলা বা কোনো উৎসব হলে সেখানে পিঠার স্টল দিয়ে থাকি। তবে এবার কিছুটা ভিন্ন; তাল পিঠার উৎসব। আমার স্টলে তালের খির, হৃদয়হরণ, পাকান, তালের ফুলঝড়ি, তালের কেক, তালের মাংস পিঠা, পাখির বাসা পিঠা, তালের বড়াসহ ১৫ রকমের পিঠার পসরা সাজিয়েছি। কেনা-বেচা ভালোই হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে প্রায় ৪০-৫০ টি পিঠার স্টল বসেছে। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকার পিঠাও রয়েছে। প্রতি বছর এমন আয়োজন করলে তরুণ প্রজন্ম এসব গ্রামীন পিঠার স্বাদ পাবে।’
অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় আশির দশকে হাজিনগর-ঘুঘুডাঙা দুই কিলোমিটার সড়ক জুড়ে এই তালগাছগুলো আমি লাগিয়েছিলাম। আজকে সেই সব তালগাছ বড় হয়ে সড়কটিকে সৌন্দর্যময় করে তুলেছে।
‘মানুষজন এই সড়ক দিয়ে যখন যায়, তালগাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে একটু প্রশান্তি পায়। আমি নিজেও এলাকায় আসলে তালগাছগুলো দেখতে আসি। একটা অন্য রকম প্রশান্তি অনুভব হয়।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান গ্রাম বাংলার পিঠাপুলি। গ্রামীণ সংস্কৃতিই হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতির প্রধান জায়গা। আর গ্রামীণ সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাল পিঠা। ঘুঘুডাঙ্গার দৃষ্টিনন্দন তালগাছের নিচে তাল পিঠা উৎসব আমাদেরকে সেই সংস্কৃতির শেকড়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।’
প্রতি বছর ২৪ সেপ্টেম্বর তাল সড়কে পিঠা উৎসব আয়োজনের আহ্বানও জানান তিনি।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ, পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া, নিয়ামতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ আহম্মেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়া মারীয়া পেরেরা এবং হাজীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক।