ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় অন্যান্য বছরের মতো এবারও আগাম আলু চাষের প্রস্তুতি শুরু করেছেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা। এরই মধ্যে কেউ জমি তৈরি, কেউ বা সার ছিটানো আবার কেউ বীজ রোপণ শুরু করেছেন।
আগাম রোপা আমন ধান কাটার পর আগাম আলু চাষের জমি তৈরিতে এখন দম ফেলার সময় নেই উপজেলার কৃষকদের।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, রোপণের ৫৫-৫৮ দিনের মধ্যে এই আলু তোলা যায়। এতে ভালো ফলন ও দাম পেয়ে থাকেন কৃষকরা। এই আলু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হয় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।
তাদের দাবি, দেশে সবচেয়ে বেশি আগাম আলু উৎপাদন হয় কিশোরগঞ্জ উপজেলায়। মাগুড়া ও গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি আগাম আলু চাষ হলেও অন্য সাত ইউনিয়নেও অনেকে আলু ফলান।
বাহাগিলি ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি গ্রামের আলু চাষি সাইয়েদার রহমান জানান, এবার তিনি ৬ বিঘা জমিতে আগাম আলুর চাষ করবেন। এরই মধ্যে জমি তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে বীজ রোপণ শুরু হবে। এই জমিতে আগে আগাম আউশ ধান করেছিলেন।
একই গ্রামের বসুনিয়াপাড়ার এজাজুল ইসলাম জানান, আলু চাষের জন্য তিনি তৈরি করেছেন ৩ বিঘা জমি। হালচাষ, সার ছিটানোর কাজ শেষ করেছেন। শিগগিরই আলুর বীজ রোপণ করবেন।
ওই জমিতে আগাম আউশ ধান করেও ভালো দাম পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
এজাজুল বলেন, ‘বছরে চারটি ফসল উৎপাদন করি। এর মধ্যে আউশ, আলু, তামাক ও ভুট্টা রয়েছে।’
কাজ থাকায় খুশি দিনমজুররাও। বাজে ডুমুরিয়া গ্রামের রাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘৩০০ টাকা হাজিরায় আমরা ১৬ জন কাজ করছি শামীম হোসেন বাবুর জমিতে। তার ২৫ বিঘা জমিতে আলু লাগানো হবে। হাজিরার পাশাপাশি দুপুরের খাবারও দেন।
‘আগাম আমন কাটার পর আগাম আলুতে সময় দিচ্ছি আমরা। আগাম আলু না হলে আমাদের এ সময় বসে থাকতে হতো।’
আলু চাষি শামীম হোসেন বাবু জানান, রোপণের ৫৮-৬০ দিনের মাথায় আগাম আলু জমি থেকে তোলা যায়। পাইকাররা জমিতেই ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে নিয়ে যান। স্থানীয় বাজারে ৮০-৯০ টাকা এবং ঢাকার বাজারে আগাম আলু ১২০ টাকা দরেও বিক্রি হয়।
তিনি বলেন, ‘এক বিঘায় ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। জমিতেই যদি ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়, তাহলে ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ আসে এক বিঘায়।’
শামীম আরও বলেন, ‘বিঘাপ্রতি ৩০-৩৫ মণ আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। এবার আবহাওয়া খুব ভালো। আশা করি ভালো ফলন ও লাভ পাব।’
পুটিমারী ইউনিয়নের পানিয়াল পুকুর ব্লকের উপসহকারী কর্মকর্তা নিরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘আমার ব্লকে আড়াই হাজার কৃষক। তাদের মধ্যে দুই হাজার কৃষক আলু করছেন।
‘জমি তৈরি থেকে শুরু করে রোপণ পদ্ধতি, রাসায়নিক সার ছিটানো এবং পরিচর্যার বিষয়ে আমরা প্রতিনিয়ত তাদের পরামর্শ দিচ্ছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, এ বছর উপজেলায় রোপা আমন চাষ হয়েছে ৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। বিঘাপ্রতি অন্তত ১৬ মণ ধান হয়েছে এসব জমিতে।
আর আগাম আমনের পর আগাম আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে। এটি লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে যাবে। গতবার উপজেলায় আগাম আলু চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, দেশের মধ্যে একমাত্র কিশোরগঞ্জেই আগাম আলু হয়ে থাকে, যা স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে যায় রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায়।
তিনি বলেন, ‘কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পাশে রয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। সেপ্টেম্বরজুড়ে আলু বীজ রোপণ করা হবে। এবার সাত জাতের আলু বীজ লাগানো হচ্ছে। অন্যান্যবারের মতো এবারও ভালো ফলন ও দাম পাবেন কৃষক।’