বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জলবায়ু পরিবর্তন: ক্ষতিপূরণ ও অভিযোজনে প্রযুক্তি চান প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:২৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধনী অথবা দরিদ্র-কোনো দেশই এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে নিরাপদ নয়। তাই আমি ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, নিঃসরণের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং টেকসই অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তির অবাধ হস্তান্তরের আহ্বান জানাচ্ছি।’

করোনাভাইরাস মহামারি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে।

এ জন্য ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমানো ও ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং টেকসই অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তির হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ৭৬তম অধিবেশনে শুক্রবার দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘এ (করোনা) মহামারি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে অধিকমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ইন্টারগভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের ওয়ার্কিং গ্রুপ-১-এর প্রতিবেদনে আমাদের এ গ্রহের ভবিষ্যতের এক ভয়াল চিত্র ফুটে উঠেছে।’

দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ধনী অথবা দরিদ্র-কোনো দেশই এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে নিরাপদ নয়। তাই আমি ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, নিঃসরণের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং টেকসই অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তির অবাধ হস্তান্তরের আহ্বান জানাচ্ছি।’

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম এবং ভালনারেবল-২০ গ্রুপ অব মিনিস্টার্স অফ ফাইন্যান্স-এর সভাপতি হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজ দেশে নেয়া পদক্ষেপগুলো বিশ্ব সভায় তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা- দশক ২০৩০-এর কার্যক্রম শুরু করেছি। এ পরিকল্পনায় বাংলাদেশের জন্য জলবায়ুকে ঝুঁকির কারণ নয়, বরং সমৃদ্ধির নিয়ামক হিসেবে পরিণত করার কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে।’

গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় ‘কনফারেন্স অব পার্টিজ’-এর ২৬তম শীর্ষ সম্মেলন অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনার পক্ষে সমর্থন আদায়ের অপার সুযোগ করে দিতে পারে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য সবাইকে আহ্বান জানাই।’

বিপর্যস্ত শিক্ষা

করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় নেমে আসা বিপর্যয় নিয়েও কথা বলেছেন শেখ হাসিনা। আর তাই শিক্ষা সরঞ্জাম ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগে জাতিসংঘকে পাশে চান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল সরঞ্জামাদি ও সেবা, ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধার সহজলভ্যতা ও শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করতে হবে। এ জন্য আমরা জাতিসংঘকে অংশীদারিত্ব ও প্রয়োজনীয় সম্পদ নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানাই।’

জাতিসংঘ শিশু তহবিলের তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে আংশিক বা পুরোপুরি বিদ্যালয় বন্ধের কারণে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিম্ন আয়ের দেশগুলোর লাখ লাখ ছাত্রছাত্রীর দূরশিক্ষণে অংশগ্রহণের সক্ষমতা ও প্রযুক্তি না থাকায় ভর্তি, স্বাক্ষরতার হার ইত্যাদি অর্জনগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।’

উন্নয়নশীল দেশে ‍উত্তরণে বাধা মহামারি

স্বল্পোন্নত দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করোনা মহামারির কারণে বিপন্ন হচ্ছে বলে অভিমত প্রধানমন্ত্রীর। তাই টেকসই উন্নয়নে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে প্রণোদনার দাবি রাখেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড-১৯ অতিমারির নজিরবিহীন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পথে রয়েছি। তবে, এ মহামারি অনেক দেশের উত্তরণের আকাঙ্ক্ষাকে বিপন্ন করেছে।

‘স্বল্পোন্নত দেশের টেকসই উত্তরণ ত্বরান্বিত করার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আমরা প্রণোদনাভিত্তিক উত্তরণ কাঠামো প্রণয়নে আরও সহায়তা আশা করি।’

এলডিসি-৫ সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কমিটির সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করি যে, দোহা সম্মেলনের সুনির্দিষ্ট ফলাফল আরও বেশি সংখ্যক দেশকে সক্ষমতা দান করবে, যেন তারা স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে টেকসইভাবে উত্তরণ করতে পারে।’

প্রবাসীদের চাকরিচ্যুত না করার আহ্বান

করোনা মহামারিকালে প্রবাসী কর্মীদের চাকরিচ্যুতি, বেতন কাটা, বাধ্যতামূলক প্রত্যাবর্তনে উদ্বেগ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংকটকালে তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে অভিবাসনগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মহামারিকালে প্রবাসীরা অপরিহার্য কর্মী হিসেবে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য জরুরি সেবাখাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘তাদের অনেকে চাকুরিচ্যুতি, বেতন কাটা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সামাজিক সেবার সহজলভ্যতার অভাব ও বাধ্যতামূলক প্রত্যাবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সংকটকালে অভিবাসীগ্রহণকারী দেশগুলোকে অভিবাসীদের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করার এবং তাদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য এবং কল্যাণকে নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

শান্তির সপক্ষে বাংলাদেশ

সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রেখেছি।’

বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহামারির নজিরবিহীন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বজুড়ে কঠিনতম পরিবেশে নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশকে ‘নিরস্ত্রীকরণের অবিচল সমর্থক’ হিসেবে বিশ্বসভায় তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, পারমাণবিক ও অন্যান্য গণবিধ্বংসী অস্ত্রের সম্পূর্ণ নির্মূলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।’

আর তাই বাংলাদেশ ‘পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি’ অনুস্বাক্ষর করেছে বলে জানান তিনি।

চলতি বছরের শুরুতে চুক্তিটি কার্যকর হয়েছে।

জাতিসংঘ হোক ‘ভরসার সর্বোত্তম কেন্দ্রস্থল’

সার্বজনীন বিষয়গুলোতে বিশ্বের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং নতুন নতুন অংশীদারত্ব ও সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে বিভিন্ন অঞ্চলের সদস্য দেশগুলো এই জাতিসংঘের মঞ্চ থেকেই তা শুরু করতে পারে। তবেই আমরা সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উত্তরণের লক্ষ্যে একটি অর্থবহ সহযোগিতা অর্জন করতে পারব।’

ক্রান্তিকালে জাতিসংঘকে ‘ভরসার সর্বোত্তম কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সেই ভরসাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রত্যয়ে আমরা সবাই হাতে হাত মিলিয়ে একযোগে কাজ করি।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই কালরাতের কথা। জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে পিতা হত্যার ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশার কথা জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা।

তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার এই মহান সংস্থার সামনে বিগত প্রায় ৪৬ বছর আগে আমার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশার কথা তুলে ধরতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রীর বর্ণনায় উঠে আসে সেই কালরাতের কথা। তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোরে একদল বিপথগামী ঘাতক আমার পিতা, বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমার স্নেহময়ী মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, ১০ বছরের শেখ রাসেল, চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসেরসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্য ও নিকটাত্মীয়কে নির্মমভাবে হত্যা করে।’

ছোটবোন শেখ রেহানাসহ তিনি ওই সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ৬ বছর দেশে ফিরতে দেয়া হয়নি। স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে বিদেশের মাটিতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছি।’

দেশে ফিরে মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আজও আমি কাজ করে যাচ্ছি।’

যতদিন বেঁচে থাকবেন মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাবেন বলে নিজের প্রত্যয় জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ বিভাগের আরো খবর