বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘শক্তি দেখালেন’ জাহাঙ্গীর, চক্রান্তকারীর মুখোশ খোলার ঘোষণা

  •    
  • ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২২:২৫

‘মিথ্যা মিথ্যাই থাকবে। ষড়যন্ত্রকারীরা যত বড় শক্তিশালীই হোক, তাদের মুখোশ একদিন খুলবে। যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে, যত বড় ষড়যন্ত্রকারীই হোক, তাদের মুখোশ খুলে দেব।

বাংলাদেশ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অগ্রগতি সম্মাননা পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে আনন্দ সমাবেশে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মূলত নিজের শক্তি দেখালেন।

মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ নিয়ে তার শাস্তি চেয়ে আওয়ামী লীগেরই নেতা-কর্মীদের টানা বিক্ষোভের মধ্যে তাদের কর্মসূচি স্থলের পাশে সমাবেশ করলেন মেয়র। বলছেন, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে, তার সবই ষড়যন্ত্র। তিনি সব চক্রান্তকারীর মুখোশ খুলে দেবেন।

শুক্রবার বিকেলে বোর্ডবাজার ইউটিসি চত্বর বালুর মাঠে এই সমাবেশটিকে ঘিরে এলাকায় ছিল উত্তেজনা। মেয়রের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ১০০ গজ দূরেই তার শাস্তি চেয়ে আওয়ামী লীগের একটি অংশের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়। দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেলও ছোড়াছুড়ি হয়। পরে পুলিশ বিরোধী পক্ষের এক নেতাকে সরিয়ে নিলে উত্তেজনার অবসান হয়।

দিন পাঁচেক আগে মেয়র যখন দেশের বাইরে, সে সময় ভিডিওটি ভাইরাল হয়। আর বুধবার থেকেই জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার, মেয়র পদ থেকে অপসারণ ও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলতে থাকে।

মহানগর আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাই গত দুই দিনের বিক্ষোভে সংহতি জানিয়েছেন, যাদের মধ্যে আছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানও। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর।

আজমত জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রে জানিয়েছেন আর শীর্ষ নেতারা বিষয়টি জেনে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কেন্দ্রের দিন নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন তারা।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার সময় মেয়র ছিলেন ভারতে। তিনি ফিরেছেন বুধবার মধ্যরাতে। আর দুই দিন পর সমাবেশ ডেকে সমর্থকদের জড়ো করে মূলত দলে নিজের অবস্থানের জানান দিয়েছেন।

বোর্ডবাজারের সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম

নগরীর ছয়দানা এলাকার নিজ বাসা থেকে বিকেল ৪টার কিছু সময় পর বের হন মেয়র জাহাঙ্গীর। হাজারখানেক নেতা-কর্মী নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে সমাবেশস্থলের দিকে যান তিনি। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে তিনি মঞ্চে ওঠেন। মঞ্চে ওঠার পরপর নেতা-কর্মীরা তাকে ঘিরে স্লোগান দিতে থাকেন।

সমাবেশে মেয়র বলেন, ‘মিথ্যা মিথ্যাই থাকবে। ষড়যন্ত্রকারীরা যত বড় শক্তিশালীই হোক, তাদের মুখোশ একদিন খুলবে। যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে, যত বড় ষড়যন্ত্রকারীই হোক, তাদের মুখোশ খুলে দেব।

‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের মোকাবিলা করব। তারা অনেককেই ভুল বুঝিয়েছে, মিথ্যা আইডি দিয়ে ফেসবুক খুলে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, আওয়ামী লীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’

বোর্ডবাজার ইউটিসি চত্বরে মেয়র অনুসারীদের সমাবেশের একাংশ

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশীদ। সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মোজাম্মেল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ নয়ন, গাজীপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এস এম মোকছেদুল আলম, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এস এম আলতাব হোসেন, তিন সিটি কাউন্সিলর আজিজুর রহমান শিরিষ, আব্দুল কাদের মণ্ডল ও হাজী মনির, মহানগর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিনা ইউনুসও এ সময় বক্তব্য রাখেন।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর জন্য, আওয়ামী লীগের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। বঙ্গবন্ধু আমাদের এ জন্মভূমি উপহার দিয়েছেন। আমি তাঁর ছবি দেখে, কথা শুনে… বাবা-মা যখন আমাকে কথা বলতে শিখিয়েছেন তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসতে শিখেছি। বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে আমি কোনো আপস করব না।

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে কম বয়সে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে এনেছেন মানুষের সেবা করার জন্য। তিনি আমাদের গাজীপুর সিটি করপোরেশন উপহার দিয়েছেন, আমাকে নগরবাসীর সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন, আমি নগরবাসীর সেবা করতে চাই।’

ভিডিরও পুরো বিষয়টিকে চক্রান্ত আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সিটি করপোরেশনের উন্নতির জন্য ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়ায় প্রতিপক্ষ ঈর্ষান্বিত হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক কুৎসা রটনা করে যাচ্ছে।’

দিনভর যা হয়েছে

টানা তৃতীয় দিন বিক্ষোভের অংশ হিসেবে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বোর্ডবাজার বড় মসজিদের সামনে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে মিছিল ও সমাবেশ ডাকা হয় মেয়র জাহাঙ্গীরের শাস্তি ও বহিষ্কারের দাবিতে।

পাশেই বিকেল সাড়ে তিনটায় বোর্ডবাজারের ইউটিসি চত্বরে আলোচনা সভা ও আনন্দ মিছিলের আয়োজন করেন মেয়র অনুসারীরা। এ সমাবেশে মেয়র জাহাঙ্গীর যে যোগ দেবেন, তা জানানো হয় আগেই।

দুই পক্ষের এই বিক্ষোভে উত্তেজনার মধ্যে এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুপুর থেকেই চার শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেখানে মোতায়েন করা হয় জলকামানও। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

বেলা তিনটার পর থেকে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরাই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। ঝাড়ু হাতে মিছিল নিয়ে আসতে দেখা গেছে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মীদের।

এই সমাবেশকে ঘিরে মেয়র অনুসারী ও বিরোধীদের অবস্থানের কারণে মোতায়েন হয় পুলিশ, সাঁজোয়া গাড়ি

বিকেল ৪টার দিকে ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ব্যানারে নেতা-কর্মীরা আনন্দ মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন।

জাহাঙ্গীরবিরোধী বিক্ষোভের আয়োজকরা ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মামুন মণ্ডলের কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীদের মুখে পড়েন জাহাঙ্গীর অনুসারীরা।

এ সময় দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপে আবু সাঈদ নামে মেয়রের এক সমর্থক আহত হন। আবু সাঈদ জানান, হামলায় আরও দুজন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবিতে বোর্ডবাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ

এর মধ্যে কাউন্সিলর মামুন মণ্ডলকে সরিয়ে নেয় পুলিশ। পরে জাহাঙ্গীরবিরোধী বিক্ষোভকারীরাও একে একে চলে যান।

এরপর জাহাঙ্গীরের অনুসারীরা নির্বিঘ্নে সমাবেশ করেন।

এ বিভাগের আরো খবর