ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে এক যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগে তার ‘শাশুড়িকে’ আটক করা হয়েছে।
রাণীশংকৈল উপজেলার ভাঙবাড়িতে গত সোমবার এ ঘটনা ঘটলেও, নির্যাতনের ভিডিও বৃহস্পতিবার ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। থানা পুলিশ শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে আটক করে করিমুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা বেগমকে। করিমুল পলাতক, খোঁজ নেই তাদের মেয়েও।
রাণীংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ ইকবাল বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই যুবক অস্বচ্ছল পরিবারের ছেলে। করিমুল-সেলিনা দম্পতির মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। করিমুল গ্রামের প্রভাবশালী লোক।
পরিবারকে না জানিয়ে ওই যুবক ও করিমুলের মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। যুবকের বাবার দাবি, পালিয়ে গিয়ে তারা বিয়েও করে। পরে বিয়ে মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে তার ছেলে ও ‘পুত্রবধূ’ বাড়ি ফিরে আসে। মেয়েটি নিজ বাড়িতে গেলে গত সোমবার তার সঙ্গে দেখা করতে যায় ওই যুবক। সে সময় মেয়ের বাবা-মা ছেলেটিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে।
এলাকার লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ছেলেটিকে উদ্ধার করে।
ছেলের বাবা খলিলুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কত দিন আগে আমার ছেলে বিয়ে করেছে, আমি জানি না। তবে পাড়ার লোকদের মুখে শুনি তারা দুইজন ভালোবেসে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছে। প্রায় দুইমাস যাবত তারা ঢাকায় ছিল। মাঝে মাঝে আমাকে ফোন দিত।
‘ওই মেয়ের বাবা করিমুল আমাকে বলেন যে দুইজনকে আসতে বলেন, আমরা বিয়েটা মেনে নেব। চার দিন আগে তারা দুইজন বাড়িতে আসে। মেয়েকে তার বাবা তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। গতকাল আমার ছেলে দেখা করতে গেলে তাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করে করিমুল ও তার স্ত্রী। পরে পুলিশ গিয়ে আমার ছেলেকে রাণীশংকৈল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।’
খলিলুর জানান, তার ছেলে এখনও হাসপাতালে ভর্তি। ঘটনার এতদিন পেরিয়ে গেলেও মামলা কেন করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি গরীব মানুষ, করিমুল বড়লোক। ভয়ে মামলা করি নাই।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চার দিন ধরে ওই যুবক হাসপাতালে ভর্তি। তার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। তাকে বাঁশ দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এখন তিনি অনেকটা সুস্থ। আমরা তাকে দুই- তিনদিনের মধ্যে ছেড়ে দেব।’
এ বিষয়ে কথা বলতে ওই যুবকের ‘স্ত্রী’র বাড়িতে গেলে পাওয়া যায়নি কাউকে। প্রতিবেশী সবেদা খাতুন বলেন, ‘মারধরের ঘটনার পর মেয়েটাকে তিন দিন ধরে দেখা যাচ্ছে না। তার মা কুলসুম বেগমকে বলতে শুনেছি যে রংপুরে মামার বাসায় মেয়েকে পাঠানো হয়েছে।’
আরেক প্রতিবেশী মকবুল হোসেন বলেন, ‘করিমুল এলাকার মধ্যে প্রভাবশালী। তাকে সবাই ভয় পায়। ওই ছেলেকে যখন গাছে বেঁধে মারা হচ্ছিল, তখন ভয়ে তাকে কেউ বাঁচাতে যাইনি।’
রানীশংকৈল থানার ওসি জাহিদ নিউজবাংলাকে জানান, ছেলের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি। তবে ঘটনার তদন্তের জন্য শুক্রবার সকালে মেয়ের মাকে ওই বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নেয়া হয়েছে। মেয়ে ও তার বাবা কাউকেই পাওয়া যায়নি। তাদেরও খোঁজা হচ্ছে।