বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিক্ষার্থীর করোনা: বিভিন্ন স্থানে স্কুলে পাঠদান বিঘ্ন

  •    
  • ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২১:১৭

শিক্ষার্থীরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট শ্রেণিতে পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। আক্রান্ত শিশুর সহপাঠীদের রাখা হচ্ছে পর্যবেক্ষণে। নজরদারিতে থাকছে তাদের পরিবারের সদস্যরাও।

দেড় বছর বন্ধ থাকার পর দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে সরাসরি ক্লাস শুরু হয়েছে ১২ সেপ্টেম্বর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে শিক্ষার্থীদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর।

সবশেষ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ শিশু শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। বুধবার করোনা আক্রান্তের বিষয়টি জানার পর বিদ্যালয়টির দুই শ্রেণিতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

এ ছাড়া গোপালগঞ্জে ২১ সেপ্টেম্বর পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ওই শ্রেণিতে পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর একই জেলায় তৃতীয় শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হয়। আর মানিকগঞ্জে করোনা উপসর্গে বুধবার মৃত্যু হয়েছে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর।

শিশু শিক্ষার্থীরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট শ্রেণিতে পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে বুধবার করোনা শনাক্ত হওয়া পাঁচ শিশু উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কলোনি এলাকার বাহাদুর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ফারহানা পারভীন নিউজবাংলাকে জানান, আক্রান্তদের মধ্যে দুজন চতুর্থ ও তিনজন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তাদের বয়স ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। তারা সবাই ঠাকুরগাঁও সরকারি শিশু পরিবার সদস্য।

তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়টিতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৪২৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে চতুর্থ শ্রেণিতে ৮৪ ও পঞ্চম শ্রেণিতে রয়েছে ৭৬ জন। বুধবার তারা জানার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ওই দুই শ্রেণিতে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলা হয়। সূচি অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেয়া হয়। বিদ্যালয়ে প্রবেশের সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করার পর শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ঢোকানো হয়।

‘আক্রান্ত পাঁচ ছাত্রী গত ১৬ সেপ্টেম্বর ক্লাসে উপস্থিত ছিল। মঙ্গলবার সরকারি শিশু পরিবার বালিকা কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের স্কুলপড়ুয়া চতুর্থ শ্রেণির দুজন ও পঞ্চম শ্রেণির তিনজন ছাত্রী জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়েছে। ওই দিনই পাঁচ শিশুর করোনা পরীক্ষার নমুনা দেয়া হয়। বুধবার আমরা জানতে পারি তারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।’

তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোর পর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে। তবে প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণির পাঠদান চলছে বলে জানান তিনি।

ঠাকুরগাঁও সরকারি শিশু পরিবার বালিকার উপ-তত্ত্বাবধায়ক রিক্তা বানু জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের থাকা শহরের হাজীপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ১৬ সেপ্টেম্বর জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যদের পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই ৫ ছাত্রী আক্রান্ত হয়।

সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত শিশু পরিবারের ২৫ ছাত্রীর নমুনা পরীক্ষায় ১৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, আক্রান্ত ১৩ ছাত্রীকে আলাদা রাখা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে তারা ভালো আছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মমতাজ ফেরদৌস বলেন, ‘বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এরপর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। আগামী এক সপ্তাহের জন্য ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস বন্ধ করে রাখা হয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার রকিবুল আলম চয়ন বলেন, সরকারি শিশু পরিবারের শিশুদের আক্রান্তের দিন থেকেই শারীরিক অবস্থা পর্যক্ষেণ করা হচ্ছে। তারা বর্তমানে সুস্থ আছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উপজেলার প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রেখে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। আমরা সব বিদ্যালয় সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। যদি কোনো শিক্ষার্থীর করোনার লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তার নমুনা পরীক্ষা করছি।

‘যেসব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তাৎক্ষণিক সেই শ্রেণির ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে। আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবাও দেয়া হচ্ছে।’

গোপালগঞ্জে দুই বিদ্যালয়ে আক্রান্ত দুই শিক্ষার্থী

গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১০২ নম্বর বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মোনালিসা ইসলামের করোনা শনাক্ত হয় ২১ মঙ্গলবার। এরপর ওই শ্রেণির পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে অন্য শ্রেণিতে পাঠদান চলছে।

মোনালিসার মা মিতু খানম নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘এতদিন আমার মেয়ে সুস্থ ছিল। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সে স্কুলে যাওয়া শুরু করে। এরপর ১৪ তারিখ থেকে তার হালকা জ্বর, মাথাব্যথা। সে জন্য পরদিন তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিই।

‘এক সপ্তাহেও মেয়ের জ্বর না কমায় ২১ সেপ্টেম্বর তার করোনা পরীক্ষা করাই। ওই দিনই পজিটিভ রেজাল্ট আসে। এরপর গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করেছি।’

এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার ৪ নম্বর ফেরধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর করোনা শনাক্ত হওয়ায় ওই শ্রেণির পাঠদান ১৪ দিনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়।

ওই শিক্ষার্থী ও তার মা দুজনেরই করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে তাদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

মানিকগঞ্জে করোনা উপসর্গে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

মানিকগঞ্জে পৌর এলাকার এসকে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বুধবার করোনা উপসর্গে মারা গেছে।

ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পথে বুধবার রাতে সুবর্ণা ইসলাম রোদেলা নামে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।

মানিকগঞ্জে করোনা উপসর্গে মৃত্যু হওয়া অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোদেলা ছবি: সংগৃহীত

পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২১ সেপ্টেম্বর থেকে রোদেলা জ্বর এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধও খেয়েছে সে। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে শ্বাসকষ্ট, গলা ও বুকে ব্যথায় অচেতন হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত মুন্নু জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ জানান, রোদেলা করোনায় আক্রান্ত ছিল কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এর আগে ওই বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী করোনা পজিটিভ হওয়ায় ওই শ্রেণির পাঠদান বন্ধ রাখা হয়। এরপর ওই শ্রেণির ৫৮ শিক্ষার্থীর করোনা পরীক্ষায় সবার নেগেটিভ আসে।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিউজবাংলার ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি রহিম শুভ,মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি আজিজুল হাকিম ও গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি মোজাম্মেল হোসেন মুন্না।

এ বিভাগের আরো খবর