করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবার দেবী দুর্গার প্রতিমা নির্মাণ করছেন আয়োজকরা। স্বল্প ব্যয়ের মধ্যেই সুন্দর প্রতিমা নির্মাণে জোরেশোরে কাজ করছেন বরিশালের মৃৎশিল্পীরা।
শুধু প্রতিমা নির্মাণই নয়, সাজসজ্জাও হচ্ছে কম খরচের মধ্যে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকট থাকলেও গত বছরের তুলনায় এবার ১৭টির পূজা বেশি হবে বরিশালে।
নগরীর বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ ঘুরে প্রতিমা নির্মাণকাজে যুক্ত মৃৎশিল্পী বা গুণরাজদের ব্যাপক ব্যস্ততা দেখা গেছে। বিগত বছরগুলোতে প্রতিমা নির্মাণ করে যে অর্থ পাওয়া যেত, তা অর্ধেকে নেমে আসায় বিষণ্নতা এসব শিল্পীর চোখে-মুখে।
বরিশালের শ্রী শ্রী শংকর মঠ পূজা মণ্ডপের জন্য দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ করছেন শিল্পী সুমন পাল। তিনি বলেন, ‘করোনার আগে প্রতিবারের পূজাতেই প্রতিমা নির্মাণ করতাম ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা মূল্যে। তবে করোনায় এ মূল্য প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। অনেক স্থানে পূজাই বন্ধ হয়ে গেছে অর্থের অভাবে।’
মহানগর পূজা মণ্ডপ ফলপট্টির প্রতিমা শিল্পী নিতাই চন্দ্র পাল বলেন, ‘পূজা কমিটিগুলো তাদের বাজেট কমিয়ে ফেলায় আমরা বিপাকে পড়েছি। কোনো মালামালের দাম তো কমেনি। কিন্তু আমাদের প্রতিমা নির্মাণ ব্যয় কমিয়ে দেয়া হয়েছে।’
শ্রী শ্রী শংকর মঠ পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কিশোর কুমার দে বলেন, ‘আমাদের পূজা সার্বজনীন। ভক্তদের অনুদানের ওপর পূজার ব্যয় নির্ভর করে। করোনায় গত বছর থেকেই আমাদের মন্দিরে অনুদান বাজেট অনুযায়ী না আসায় বিপাকে পড়তে হয়েছে।
‘তাই সবকিছু স্বল্প ব্যয়ে করতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে। আলোকসজ্জায় বাজেট থাকে প্রতি বছর প্রায় দেড় লাখ টাকা, তবে এবার মাত্র ৫৫ হাজার টাকা। সাজসজ্জায় বাজেট থাকে ১ লাখ টাকা, কিন্তু এবারে নামমাত্র সাজসজ্জা করা হবে। সব কাজ চলছে। ষষ্ঠী বিহিত পূজার দিন মণ্ডপ উন্মুক্ত করা হবে।’
মঠের সাধারণ সম্পাদক লিমন কৃষ্ণ সাহা কানু জানান, ১১ অক্টোবর ভোর ৬টা ৫৩ মিনিটে শ্রী শ্রী দুর্গা দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা। সায়ংকালে শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এরপর ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিনে দেবী দুর্গার বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
৬ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়েই পূজার আভাস শুরু হবে। পূজা উপলক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো সভা না হওয়ায় পূজা কীভাবে উদযাপন হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ।
পরিষদের সভাপতি তমাল মালাকার বলেন, ‘শহরে গত বছর থেকে এবার ২টি বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৪৫টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৬টি ব্যক্তিগত।
‘এ ছাড়া জেলায় গত বছরের তুলনায় ১৫টি পূজা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৯০টি দুর্গাপূজা হবে। সব পূজা কমিটিগুলোই বাজেট কমিয়ে এনেছে অনুদান কমে আসায়। আশা করছি পূজার আয়োজনে কোনো ঘাটতি হবে না।’
তমাল আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বরিশাল সিটির মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রশাসনের সাথে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি। এবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা মণ্ডপে প্রবেশের নির্দেশনা দেয়া হবে।’
পূজা আয়োজন নিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘দুর্গাপূজায় কঠোর নিরাপত্তাবলয় থাকবে বরিশালজুড়ে। এ ছাড়া পূজা কমিটিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে মণ্ডপগুলোতে। পূজা আয়োজনে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টিও নজরদারিতে থাকবে।’