তিন থেকে চার ফুট উচ্চতার একেকটি গাছে ঝুলছে ৫০ থেকে ৮০টি ফল। গাঢ় সবুজ রঙের ফলগুলোর কোনো কোনোটিতে হলুদাভ ভাব।
ছিমছাম ও পরিপাটি মাল্টা বাগানটির মালিক ইউনুস আহমদ। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের বাসিন্দা তিনি।
আড়াই বছর আগে শখের বশে শুরু করা বাগানটিই এখন তার আয়ের প্রধান উৎস। ৪০ শতক জমির বাগান পরিচর্যার কাজ করছিলেন ইউনুস। এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি নিউজবাংলাকে জানান, বাগানের জন্য আমের চারা কিনতে সাতক্ষীরা গিয়ে মাল্টার চারা কিনে বাড়ি ফেরেন তিনি। সৌখিন কিছু মানুষ তার কাছ থেকে এসব চারা কিনে লাগিয়েছিলেন। তবে চারা বাঁচাতে পারেননি কেউ।
ইউনুস আরও জানান, শুরুতে ইউনিয়নের ঝিরি এলাকায় দুই একর জমিতে মাল্টার ৪০০ চারা লাগিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু সবগুলো মারা যায়। তখন কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েন। তবে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেন তিনি।
এরপর টইটংয়ের জুম পাড়া এলাকার বর্তমান জমিতে চারা রোপণ করেন। পরিচর্যার মাধ্যমে ১০০ চারা বড় করতে সক্ষম হন। বাকি ৬টি চারা কলমের মাধ্যমে তৈরি করেন। চলতি মৌসুমে ১০৬টি গাছের মধ্যে ১০০টি গাছে মাল্টা ধরেছে।
তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে দেড় লাখ টাকার বেশি মাল্টা বিক্রি করেছেন৷ আরও অন্তত ৫০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করা যাবে। পাইকারি দরে ৮০ টাকা কেজিতে বাগান থেকে তার মাল্টা কিনে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
বাগানের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন জানিয়ে ইউনুস বলেন, ‘বাগানটি প্রস্তুতে আমার তিন-চার লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আগামী বছরের ফলনের মাধ্যমে মূলধন তুলে আমি লাভের মুখ দেখব বলে আশা করছি। গাছগুলো অন্তত ১০-১২ বছর ফলন দেবে। এতে প্রতি বছর দেড়-দুই লাখ টাকা আয় করা যাবে।’
পেকুয়া উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোকাদ্দেস মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘ইউনুসই পেকুয়ায় একমাত্র মাল্টা চাষি। ফলন হবে না ভেবে স্থানীয় কৃষক ধান বা মৌসুমি শাক-সবজি চাষাবাদের বাইরে যান না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সঠিক পরিচর্যা পেলে মাল্টা গাছ ২০-৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এই পর্যন্ত তিনি দুইবার ফলন পেয়েছেন। প্রথমবার এক-তৃতীয়াংশ গাছে ফল এসেছিল। এবার প্রায় প্রতিটি গাছে ফল এসেছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার রায় নিউজবাংলাকে বলেন বলেন, ‘মাল্টা বাংলাদেশের বাজারে বেশ জনপ্রিয় ফল। পাহাড়ি ঢালু জমিতে মাল্টা চাষ ভালো হয়।
‘এক মৌসুমে প্রতি গাছে ৮০-১০০ কেজি ফলন হয়। মাল্টা গাছ খুবই স্পর্শকাতর। সার-কীটনাশক দেয়ায় তারতম্য হলে গাছে নানা সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় গাছ মারা যায়।’