ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ১৫ দফা দাবির পর এবার ১০ দফা দাবি নিয়ে এসেছে তাদের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ট্যাংকলরি, প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। দাবি মানতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে তারা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরেন বৃহস্পতিবার সমন্বয় পরিষদের নেতারা। জানান, আগামী রোববারের মধ্যে দাবি না মানা হলে ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতিতে যাবেন তারা।
এর আগে ১৫ দফা দাবিতে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট দেয় ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এ বিষয়ে বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দাবি মানার আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে তারা।
ঐক্য পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় পরিষদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী।
তিনি বলেন, ‘যারা আগে দাবি দিয়েছে ও ধর্মঘট করেছে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা কী চুক্তি করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তা আমাদের জানা নেই। এটা আমাদের দাবি। তারা সেটা তাদের মতো করে করেছে।’
তবে দাবিগুলো তো একই রকম, যা মানা হবে বলে সরকার থেকে আশ্বাস এসেছে। তাহলে নতুন ব্যানারে কেন কর্মসূচি, এমন প্রশ্নে ওসমান আলী বলেন, ‘এ পর্যন্ত যত সরকার এসেছে সবাই আশ্বাস দিয়েছে। আমাদের সঙ্গে সব সরকারের সব সময় চুক্তি হয়।’
তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছরে সরকার লাইসেন্স দিতে পারল না। আমরা বলেছি লাইসেন্স দেন তারপর মামলা করেন। আমাদের মালিকদের এই করোনার সময়ে এক টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়নি। আমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে, আশ্বাসে হবে না। লিখিত চুক্তি করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।’
বাংলাদেশ ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্যাংকলরি, প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের ১০ দফা দাবি হলো:
০১ (ক). ট্রাকচালক লিটন ও আবু তালেব প্রামাণিকসহ সকল সড়ক পরিবহন শ্রমিক হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
(খ). সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০২ ধারার মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তদন্ত না করে ৩০২ ধারায় মামলা করা যাবে না।
০২. ড্রাইভিং লাইসেন্সের জটিলতা নিরসন করে লাইসেন্স প্রদান করতে হবে।
০৩. পণ্য পরিবহনের সময় মালামাল চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে জরুরি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন, তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
০৪. বর্ধিত আয়কর প্রত্যাহার করে জরিমানা ছাড়া গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদ করার সুযোগ দিতে হবে।
০৫. সড়ক-মহসড়কে কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে পুলিশি হয়রানি, চাঁদাবাজি বা মাসিক মাসোহারা বন্ধ করতে হবে।
০৬. মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা ব্যয় বা সার্ভিস চার্জ আদায় করার সুযোগ দিতে হবে।
০৭. বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি করার উদ্যোগ বাতিল করতে হবে।
০৮ (ক). সড়ক-মহাসড়কের পাশে এবং প্রত্যেক জেলায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ট্রাক ও বাস টার্মিনাল নির্মাণ ত্বরান্বিত করতে হবে।
(খ). চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ট্রেইলর শ্রমিক ইউনিয়ন কর্তৃক গত ৩০ মে ও ২৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা সুপারিশগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং পণ্যবাহী গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশের সময় ড্রাইভারদের ডাটাবেজ সমস্যার সমাধান করতে হবে।
০৯. স্থানীয় সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী টার্মিনাল ছাড়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ চাঁদা ও টোল আদায় বন্ধ করতে হবে।
১০. দেশে সড়ক মহাসড়কগুলো শুধুমাত্র হাইওয়ে পুলিশের অধীনে তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে এবং নির্দিষ্ট স্থানে কাগজপত্র চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
ওসমান আলী বলেন, ‘তারা আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে আমাদের আগেই ধর্মঘট ডেকে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য পাতানো ধর্মঘট করেছে। এ ব্যাপারে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে সকল মালিক-শ্রমিকদের তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহবান জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক মো. রুস্তম আলী খান, সদস্যসচিব মো. তাজুল ইসলামসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।