ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত বেসরকারি ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার ভল্ট থেকে ১৯ কোটি টাকা উধাও হয়েছে।
গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে এসেছে বৃহস্পতিবার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং পরিদর্শন বিভাগ-৭-এর এক যুগ্ম-পরিচালকের নেতৃত্বে ২০ সেপ্টেম্বর সোমবার একটি দল ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখা পরিদর্শনে যায়।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী শুরুতেই পরিদর্শক দল ভল্ট পরিদর্শন করে। কাগজে-কলমে শাখার ভল্টে ৩১ কোটি টাকা দেখানো হলেও সেখানে ১২ কোটি টাকা পায় পরিদর্শক দল। বাকি টাকার বিষয়ে ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কোনো জবাব দিতে পারেননি।
এত বড় অনিয়মের তথ্য উদঘাটনের পরও শাখার কারও বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো অভিযোগ দায়ের বা ব্যবস্থা নেয়া হযনি বলে সূত্রে জানা গেছে।
ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখন ব্যাংকটির সব শাখার ভল্ট পরিদর্শন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ইউনিয়ন ব্যাংকের ভল্টের টাকায় গরমিল হতে পারে। কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে ভল্টের টাকায় গরমিলের মতো প্রমাণ যদি বাংলাদেশ ব্যাংক পায়, তবে অবশ্যই যথাযথ নিয়ম মেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিরাজুল ইসলাম জানান, ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার ভল্ট পরিদর্শনে গিয়ে টাকার গরমিল পাওয়া গেছে এ তথ্য তিনি শুনেছেন। এখন তাদের ব্যাখ্যা তলব করা হবে। যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা না পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রতিদিন লেনদেনের শুরুতে এবং শেষে ভল্টের টাকা মিলিয়ে রাখার দায়িত্ব শাখার ব্যবস্থাপক, সেকেন্ড অফিসার এবং ক্যাশ ইনচার্জের। ভল্টে টাকার হিসাবে কোনো গরমিল হলে তা মিলিয়ে নেয়ার দায়িত্ব এসব কর্মকর্তার।
অনেক সময় হিসাবের ভুলে সামান্য টাকার গরমিল হতে পারে। তবে বড় অঙ্কের টাকার গরমিল হলে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পুলিশে সোপর্দ করার বিধান আছে।
তবে ইউনিয়ন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার আওতাধীন গুলশান থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ থানায় আসেনি।
বিষয়টি মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ধামাচাপা দেয়ার তৎপরতা চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।
এর আগে চলতি বছরের ১৭ জুন ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার ভল্টে পৌনে ৪ কোটি টাকার হিসাব গরমিল পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, এ টাকা সরিয়ে নেন ওই ব্যাংকেরই একজন কর্মকর্তা।
ওই ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শাখাটির দুই কর্মকর্তাকে পুলিশ হেফাজতে দেয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
এ ছাড়া, কয়েক মাস আগে ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে ব্যাংকটির একজন আইটি অফিসারও ১ হাজার ৩৬৩টি লেনদেনের মাধ্যমে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। ঘটনাটি ব্যাংকের অডিটে ধরা পড়ে।