বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এস-ফ্যাক্টরে ‘কোটি টাকা হাতিয়ে নিল’ সুইসড্রাম

  •    
  • ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২২:০৩

প্রতারক চক্রটির মূল হোতা কাজী আল-আমিন দামি ব্রান্ডের গাড়ি নিয়ে কোম্পানির নতুন সদস্যদের কাছে কখনও প্রবাসী, কখনও বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন।

কোম্পানির নাম সুইসডার্ম। বাজারে আছে তাদের এক মহৌষধ ‘এস-ফ্যাক্টর’। দাবি, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও হার্টের অসুখসহ এমন কোনো রোগ নেই যার নিরাময় এই ওষুধটি করতে পারে না। সম্প্রতি এই ওষুধকে তারা করোনা প্রতিরোধী হিসেবেও প্রচার করে আসছিল।

চাকচিক্যময় প্রচারের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের (এমএলএম) মাধ্যমে এই ওষুধ বিক্রি করা হতো গ্রাহকদের কাছে। যারা কিনতেন, কোম্পানির সদস্য করা হতো তাদের।

কোম্পানির নতুন সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে টাকা হাতিয়ে নিতো সুইসডার্ম। সর্বনিম্ন ৪ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১ লাখ ১৭ হাজার টাকায় তাদের সদস্য হওয়া যেত। টাকার বিনিময়ে সদস্যদের দেয়া হতো মহৌষধ নাম দেয়া এই এস-ফ্যাক্টর।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে কোম্পানিটির প্রায় ৫০ হাজার সদস্য রয়েছে। তাদের কাছ থেকেই ২০-২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এমএলএম পদ্মতিতে এই ভূয়া পণ্য বিক্রির ফাঁদ পেতেছিলেন মুন্সিগঞ্জের কাজী আল-আমিন। তার এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত আছেন আরও বেশ কিছু মানুষ। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। প্রতারণার অভিযোগে আল-আমিনসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রতারণার কৌশল জানিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাও হয়েছে।

প্রতারণার অভিযোগ গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ জন

র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওরা বিভিন্ন ওষুধের কথা বলতো। যেগুলোর মিথ্যে এবং অবাস্তব গুণের কথা বলে সামর্থ্যবানদের কাছে বিক্রি করে সদস্যপদ দিত। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও বিস্তারিত তথ্য নেয়ার চেষ্টা চলছে।’

যেভাবে সদস্য সংগ্রহ

র‌্যাবের ভাষ্যমতে, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রতারণাকেই পেশা হিসেবে নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করেছিল। বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের কর্মী ও সদস্য আছে; যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেকার তরুণ-তরুণীদের স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখাত।

প্লাটিনাম, গোল্ড, সিলভার ও সাধারণ হিসেবে সদস্যদের অর্ন্তভুক্ত করা হতো। কথাবার্তায় পটু, আর্থিকভাবে মোটামুটি স্বচ্ছলরাই ছিল তাদের লক্ষ্য। কেউ সদস্য হয়ে গেলে তিনিও নতুন সদস্য সংগ্রহের মিশনে নেমে যেতেন।

যেহেতু টাকা দিয়ে সদস্য হতে হয়, সেহেতু নতুন সদস্য যত বেড়েছে কোম্পানিটি ততই ফুলে ফেঁপে ওঠেছে। এভাবেই প্রায় ৫০ হাজার সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে ২০-২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

যত কৌশল

গ্রেপ্তার কাজী আল-আমিন দামি ব্রান্ডের গাড়ি নিয়ে কোম্পানির নতুন সদস্যদের কাছে কখনও প্রবাসী, কখনও বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে মনোনয়ন দেয়া হতো। যার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া হতো।

শিকারদের প্রলুব্ধ করে এবং তথ্যাদি সংগ্রহ করে নানা কৌশলে প্রতারক চক্রের অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসা হতো। এদেরকে গ্রাহক প্রতি বা নির্দিষ্ট সংখ্যক গ্রাহক সংগ্রহের টার্গেট দিয়ে বিপুল অর্থ প্রদানের লোভ দেখানো হতো।

চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অভিজাত ও আকর্ষণীয় রেস্তোরাঁয় ভিকটিমদেরকে নিয়ে এসে সভা-সেমিনার, লাঞ্চ ও ডিনার পার্টির আয়োজন করত।

সেখানে সুইসডার্ম অ্যাপস-এ একাউন্ট খোলার আহ্বান জানানো হতো।

ঘন ঘন অফিস পরিবর্তন করা ছিল তাদের আরেকটি কৌশল। প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট কোন সাইনবোর্ড বা ঠিকানাও ব্যবহার করত না তারা।

নতুন সদস্যদের ৫টি ক্যাটাগরির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। ১ ও ২ ক্যাটাগরিতে যথাক্রমে ৪,২০০ ও ৬,২০০ টাকায় ১ প্যাকেট ওষুধ এবং ৩ ও ৪ ক্যাটাগরিতে ২৬,২০০ ও ৫৮,০০০ হাজার টাকায় ৬ থেকে ১৪ প্যাকেট এবং ৫ নম্বর ক্যাটাগরিতে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকায় ২৮ প্যাকেট এস-ফ্যাক্টর দেয়া হতো।

আরও যেসব অভিযোগ

র‌্যাব বলছে, কোম্পানিটির সব কার্যক্রমই প্রতারণামূলক। পণ্যগুলো বাজারজাত করতে বিএসটিআই এবং ঔষধ প্রশাসনের কাছ থেকে তারা কোনো অনুমতি নেয়নি। পণ্য আমদানি সংক্রান্ত কোম্পানির সঙ্গে তাদের বৈধ কাগজপত্র নেই। ।

এস-ফ্যাক্টর ছাড়াও সৌন্দর্যবর্ধনকারী কয়েকটি প্রসাধনীও তারা উচ্চমূল্যে বিক্রি করত। এগুলো শরীর ও ত্বকে ব্যবহার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

এ বিভাগের আরো খবর