স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করায় বাদীকে থানায় নিয়ে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বরগুনা থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। বৈদ্যুতিক শক দেয়ার অভিযোগও করেছেন বাদী বিনয় চন্দ্র শীল।
বরগুনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বুধবার বিকেলে এমন অভিযোগ আনেন বিনয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে চিকিৎসার জন্য তিনি বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের আমতলা গ্রামের বিনয় সংবাদ সম্মেলনে জানান, সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ এনে বালিয়াতলী ইউনিয়নের সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা খালেদা ইসলাম সুইটির বিরুদ্ধে সম্প্রতি বরগুনার আদালতে মামলা করেন তিনি। শুনানি শেষে বিনয়ের স্বাক্ষর করা ওই সাদা কাগজ উদ্ধারের নির্দেশ দেয় আদালত।
তিনি অভিযোগ করেন, মামলা তুলে নিতে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে উপজেলার মাইঠা বাসস্ট্যান্ড থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় আওয়ামী লীগ নেত্রী সুইটির পক্ষের লোকজন। সেখানে তাকে দফায় দফায় নির্যাতন করা হয়।
গভীর রাত পর্যন্ত বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম তারিকুল ইসলাম তাকে বৈদ্যুতিক শকসহ অভিনব কায়দায় নির্যাতন করেন জানিয়ে বিনয় বলেন, ‘ওই সময় সুইটিসহ তার পক্ষের লোকজন থানায় উপস্থিত ছিলেন। নির্যাতনের কারণে বর্তমানে আমি হাঁটতে পারছি না। মেরুদণ্ডের ব্যথায়ও ভুগছি।’
তিনি অভিযোগ করেন, বেশ কিছুদিন ধরে স্ত্রী ও মাদকাসক্ত ছেলেদের সঙ্গে তার বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে সালিশ হলে সুইটি রোয়েদাদ লিখবেন বলে সাদা কাগজে তার স্বাক্ষর নেন। পরে সেই কাগজে জোর করে ছেলে ও স্ত্রীর নামে জমি লিখে দিতে বলেন।
তিনি রাজি না হয়ে স্বাক্ষরযুক্ত কাগজ ফেরত দেয়ার অনুরোধ করেন। পরে কাগজ ফেরত চেয়ে বরগুনার আদালতে সুইটিসহ কয়েকজনের নামে মামলা করেন।
সুইটির ছেলে মুশফিক আরিফের সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে পুলিশের সঙ্গে বিশেষ সখ্য রয়েছে জানিয়ে বিনয় অভিযোগ করেন, ওই সম্পর্ককে ব্যবহার করে আরিফ ও তার মা সুইটি বিভিন্ন সময় এলাকার অনেককে অন্যায়ভাবে হেনস্তা করেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের পুলিশ দিয়ে শায়েস্তা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিনয়ের বৃদ্ধ বাবা বলরাম চন্দ্র শীল জানান, তার ছেলের বিরুদ্ধে বরগুনা থানাসহ কোথাও কোনো অভিযোগ নেই। তারপরও তার ছেলেকে এভাবে নির্যাতনের বিচার চান তিনি।
বিনয়ের প্রতিবেশী শহিদুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘বিনয়ের সঙ্গে তার স্ত্রী কাজল রানীর কলহের জের ধরে ছেলে বিশ্বজিৎ শীল প্রায়ই তাকে মারধর করে। আমরা অনেকবার তাদের মিল-মীমাংসা করার চেষ্টা করেছি।’
আওয়ামী লীগ নেতা সুইটি সাংবাদিকদের জানান, তার বিরুদ্ধে বিনয় চন্দ্র শীল যে অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয়। বিনয়ের পরিবারের বিরোধ মীমাংসায় সালিশ হয়েছে। রোয়েদাদ লেখার কাজ চলছে।
বরগুনা সদর থানার ওসি কে এম তারিকুল ইসলাম নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি ওই দিন রাত ১০টা থেকে অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ওই সময় থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম বিনয় ও সুইটিকে নিয়ে বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করেন। তবে শেষ পর্যন্ত মীমাংসা হয়নি।
বরগুনার পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিক জানান, এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।