স্বাধীন রাষ্ট্রে সবার মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে- এমন মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, বীর মুক্তিযোদ্ধা তবরাক হোসাইন প্রশ্ন তুলেছেন, কোন অপরাধে ঝুমন দাসকে ছয় মাস ধরে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে? তার অপরাধ কী?
সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বুধবার বিকেলে ঝুমন দাসের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদী কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে দেয়া বক্তব্যে এমন প্রশ্ন তোলেন তবরাক হোসাইন।
তিনি বলেন, ঝুমন দাস হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে লিখেছেন। এই মামুনুল হকের সমালোচনা সংসদে দাঁড়িয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীও করেছেন। নানা অভিযোগে মামুনুল কারাগারেও আছেন। তারপরও মামুনুলের সমালোচনার কারণে ঝুমনকে কেনো ছয় মাস ধরে জেলে থাকতে হবে?
হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে গত ১৬ মার্চ গ্রেপ্তার হন সুনামগঞ্জের শাল্লার যুবক ঝুমন দাস। পর দিন ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকীর দিন সকালে ঝুমনের গ্রাম নোয়াওগাঁওয়ে হামলা চালায় হাজারও সশস্ত্র লোক। তারা ভাঙচুর করে ওই গ্রামের প্রায় ৯০টি হিন্দু বাড়ি। বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলাগুলোতে গ্রেপ্তার সবাই জামিন পেয়েছেন। তবে ছয় মাসেও জামিন মেলেনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় ঝুমনের।
এর প্রতিবাদে এবং ঝুমন দাসের মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার সিলেটে এই প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’।
প্রতবাদী কর্মসূচির শুরুতে শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হামলা, ঝুমনের গ্রেপ্তার ও জামিন না পাওয়ার পুরো প্রেক্ষাপট তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র সংগঠক আব্দুল করিম কিম।
তিনি বলেন, ‘ঝুমন দাস একজন গ্রাম্য যুবক। তিনি মামুনুল হককে নিয়ে যে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সেটিকে পুঁজি করে একটি গোষ্ঠী হাজার হাজার মানুষকে উসকে দিয়ে সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে হামলা চালায়। আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। সেদিন কী পরিমাণ নির্যাতনের শিকার হয়েছিল মানুষগুলো। অথচ নিজেদের প্রাণ রক্ষায় হামলার আগের রাতেই ঝুমন দাসকে আইনের হাতে তুলে দিয়েছিল সংখ্যালঘু গ্রামটির বাসিন্দারা। তারপরও তারা রক্ষা পায়নি।
‘এ ঘটনায় সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে হামলায় মামলা হয়েছে, কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সবাই জামিন পেয়েছেন। আর ঝুমন দাস এখনও জেল হাজতে। তার ৬ মাসের সন্তান নিয়ে অসহায় স্ত্রী পথে পথে ঘুরছেন। আমরা ঝুমন দাসের মুক্তি চাই। সেই সঙ্গে ডিজিটাল আইন নামক যে আইনে তাকে গ্রেপ্তার দেখান হয়েছে, এই কালো আইন দিয়ে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা নষ্ট করা হয়েছে- সে আইন বাতিল দাবি করছি।’
অবস্থান কর্মসূচিতে সমাপনী বক্তব্যে প্রবীণ আইনজীবী তবারক হোসাইন বলেন, স্বাধীনতার আগে নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে বাঙালিদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল, শোষণ-নির্যাতন ছিল। তাই আমরা এমন দেশ চেয়েছিলাম যেখানে শোষণ নির্যাতন থাকবে না। আমাদের মূল সংবিধানে নিবর্তনমূলক কোনো আইনও ছিল না। পরে এগুলো যুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে স্বাধীনতা হরণ হয়েছে। যার উদাহরণ ঝুমন দাস। তিনি যে স্ট্যাটাস দিয়েছিল সেটি আমি পড়েছি। স্ট্যাটাসে কিছু অতিরঞ্জন থাকতে পারে। তবে এটা কোনোভাবেই অপরাধ নয়।’
তবারক বলেন, ‘এ দেশে ওয়াজ মাহফিলের নামে প্রতিনিয়ন মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা হয়। সব ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করা হয়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অথচ ফেসবুকে কেউ কিছু লিখলেই তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। এই আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।’
এই আইনজীবী বলনে, ‘ঝুমনের জামিনের ব্যাপারে বৃহস্পতিবর হাইকোর্ট দেয়ার কথা। আশা করি হাইকোর্ট যথাযথ বিবেচনার মাধ্যমে ঝুমন দাসকে জামিন দিবেন। এবং সরকার তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব এনামুল মুনির, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সিলেট মহানগরের সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেটের সমন্বয়ক উজ্জল রায়, হাওর ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক কাশমির রেজা, কবি আবিদ ফায়সাল, সারী বাঁচাও আন্দোলন নেতা আব্দুল হাই আল হাদি, শিক্ষক ও সংগঠক প্রণবকান্তি দেব, আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন, মাহবুব রাসেল, প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী নিরঞ্জন সরকার অপু, তানভীর রুহেল, হিতাংশু কর বাবু, রাজীব রাসেল, অরূপ বাউলসহ আরও অনেকে।